NIKHIL GUHA

 NIKHIL GUHA

সঞ্চিতার না বলা গল্প
নিখিলরঞ্জন গুহ,

সুষমার জীবনে ‘স্বপ্ননীল’ যেন রক্তের সাথে মিশে আছে । শৈশবের দিনগুলি তাঁর কাছে আজও রহস্যময় । সমাজের বিশিষ্ট জনেদের দানই সংস্থাটির ভরসা । তবে সরকারি অনুদানও মেলে । হয়তো কোনও এক সময় বিঘা খানিক জমি নিয়ে এটা গড়ে উঠে থাকবে । জায়গাটা যে এক সময় প্রত্যন্ত গ্রাম ছিল তা বোঝা যায় । কারো বাগান বাড়িও হয়ে থাকতে পারে । অতীতে বাবু সমাজে এমন বাগান বাড়ির চল ছিল ।

চারদিকে আম,জাম,কাঠাল,পেয়ারা,তেতুল নানা জাতের গাছগাছালী ছড়ানো ছিটানো । আশ্রমটা যে বেশ পুরানো তা বুঝতে অসুবিধা হয় না । সর্বত্র অযত্নের ছাপ । কোনও কোনও আশ্রিতের জন্য নিয়মিত অর্থ আসে । এককালীন অর্থের বিনিময়ে কন্যা সন্তানকে রেখে যাওয়ারও রেওয়াজ থাকতে পারে । মনে হয় সমাজে কোনও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির বা ধনী পরিবারের সন্তানের কুকর্মের পরিণতি শিশুকন্যার জন্যও এই ব্যবস্থা । তাঁদের নাম ঠিকানাও গোপন থাকে । তবে এই সংখ্যা নগণ্য ।

অন্যেরা অনেকেই সংস্থার সাথে যোগাযোগ রাখে । মেয়েদের খবর নেয়,দেখা করে । একজন অধ্যাক্ষার উপরেই সব দায়িত্ব । পড়াশোনারও ব্যবস্থা আছে । তবে অধিকাংশই আগ্রহী নয় । সরকারি নিয়মেও নানা বাধা । মিসরাও উৎসাহ নেয় না । ক’জন মাসিও আছে । মেয়েদের মধ্যে যারা বড় মাসিরা তাঁদের কাজে লাগায় । যখন কোনও শিশুকন্যা প্রথম আসে তখন তাঁকে দেখতে সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । গৃহস্ত পরিবারে যেমন হয় এখানেও যেন ঠিক তাই হয় । বাড়িতে যেমন তাঁর দেখভালের জন্য দিদিরা এগিয়ে আসে এখানেও্ তেমনটাই হয় । যদিও এটা অনুমোদিত না, তাও করে ।

মাসিদের চাপ কমে । মাঝেমধ্যে উপর তলার লোক আসে । মেয়েদের সাথে কথা বলে, খোঁজ খবর নেয় । কখনও কখনও আগাম না জানিয়েও তাঁদের আগমন ঘটে । যেদিন আসে সেদিন সাজ সাজ রব পড়ে যায় । বছরে দুই একবার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা সরকারের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়ে থাকে । যেদিন আসে সেদিন অনেক মানুষের সমাগম ঘটে । ছবি ওঠে,বক্তৃতা হয় । ভালো মন্দ মিষ্টি বা ফলের ব্যবস্থা থাকে ।

সবকিছুই হয় মিসদের তত্ত্বাবধানে । মাসিদের কঠিন শাসন,বাইরের কারো সাথে কথা বলার উপায় নেই । নিয়ম ভাঙলে সমূহ বিপদ । যারা আসে তাঁরা জানে শিকড়হীনা মেয়েগুলির করুণা নির্ভর জীবনের কথা । গোটা ত্রিশ মেয়ে নিয়ে এই আশ্রম । একটা সময় কেমন করে যেন তাঁরা অদৃশ্য হয়ে যায় । মাসিদের মধ্যে ফিসফিসানি চলে । বাতাসে ভেসে বেড়ায় নানা গল্প । ওঁদের নাকি বিয়ে হয়ে যায়, কেউ কেউ নাকি ঘরে ফিরে যায় । তবে কোথায় যায়,কার সাথে যায় তা অজ্ঞাতই থাকে । তাঁর নতুন জীবনের কথা এ কান থেকে সে কান ঘুরে বেড়ায় । অনেক সময় মাসিরা লোক ঢোকায় ।

বড় মিসের ঘরে সুষমা একবার এমনই একজনকে দেখেছিল । চন্দনা দেখতে মন্দ না । সে সবে যৌবনে পা রেখেছে । লোকটা চন্দনাকে এমনভাবে দেখছিল যেন গিলে খাবে । সুষমার ভালো লাগেনি । চন্দনাকে আর দেখা যায়নি । লোকটাকে সুষমা আগেও একদিন দেখেছে । মাসিরাই হয়তো ব্যবস্থা করে দিয়েছিল । অনেক সময় তাঁরা বাড়াবাড়িও করে, বকাও খায় ।

মাসিরা খুব গরিব । টাকা পয়সা খুব একটা পায় বলে মনে হয় না । থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাই মনে হয় তাঁদের কাছে বড় আকর্ষণ । যারা আসে তাঁরা কারো খুড়তুতো,মাসতুতো ভাই বা বরের পরিচয় নিয়ে আসে । মাসিদের হাতে দুটো পয়সাও হয় । আশ্রিতার বিয়ে হলে সংস্থার নাম হয় । কাগজে নাম ওঠে । অনুদান প্রাপ্তিতে সংস্থার নাম এগিয়ে যায় ।

সুষমা এমনিতে মুখচোরা । আবাশিকদের সাথে তাঁর যে খুব একটা সখ্যতা আছে তা বলা যাবে না । এই জন্য তাঁকে কথাও শুনতে হয় । এই পরিবেশেও সে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার চেষ্টা করে চলেছে । এই কারণে অনেকে তাঁকে সমীহও করে । কেউ কেউ আবার হিংসেও করে । মিসরা তাঁকে বিশেষ চোখে দেখে । মিসরা চায়,যদি মেয়েটা কিছু করতে পারে তবে তা করুক । কোনও কোনও মিস তাঁকে সাহায্যও করে । সে শুনেছে ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই সে নাকি এখানে । বয়সের তুলনায় সে বেশ বুদ্ধিমতী ।

কয়েক জনের সাথে সে বেশ খোলামেলা । সঞ্চিতাদি তাঁদের মধ্যে একজন । তাঁরা একে অপরের সুখদুঃখ নিয়ে কথা বলে । সকলেই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত । সঞ্চিতাদিই সকলের মধ্যে বড় । আঠারো ছুঁই ছুঁই । সঞ্চিতা ভয় পায় । এই বয়সটা নাকি ভালো না । সেটা গ্রীষ্মকাল । সুর্য তখন মধ্য গগনে । গাছের ছাওয়ায় অলস মুহূর্তে গল্প করতে করতে সঞ্চিতাদি যেন কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল ।

সুষমা- কিরে কী হল ? থেমে গেলি যে ।

সে উত্তর দিয়ে বলেছিল, কিছু না ।

সুষমাও নাছোড় । সঞ্চিতা যেন কিছু একটা গোপন করতে চায় । সে জানে এখানে সকলেই অবৈধ সন্তান অথবা পতিতা । অদৃষ্টকেই দোষ দেয় তাঁরা । কারণ অনুসন্ধানে তাঁদের প্রবৃত্তি নেই । কারণেরা ঘুরে বেড়ায়,দূষণ ছড়ায় । সমাজ এঁদের সনাক্ত করে না, ভয় পায় । পৃথিবীর আলো দেখায় যে দেবশিশুদের কোনও হাতই ছিল না তাঁরাই সেই পাপের দায় বহন করে চলে । সুষমা লক্ষ্য করল,সঞ্চিতাদির চোখে জল । সে প্রশ্ন করল, তুই কাঁদছ যে ? থাক বলতে হবে না ।

সে উত্তর দিয়ে বলেছিল, ‘দিব্যি কেটে বল, কাউকে বলবি না’ ।

সুষমা তাই করেছিল ।

কারো কানে গেলে আমার বিপদ হবে, বলেছিল সঞ্চিতা ।

‘ভয় নেই,যদি ভরসা রাখিস তবেই বলবি’, জবাব দিয়ে বলেছিল সুষমা ।

সুষমার ওপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস । না না, তোকে আমি বিশ্বাস করি । সঞ্চিতা বলতে শুরু করল তাঁর না বলা জীবন কাহিনি;

সেদিন বড় মিস সাত সকালেই অফিসে এসে উপস্থিত । তাঁকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল । মাসিরাও চলে এসেছে । একজন এসে বলে গেলেন, বাবুরা আসবেন । সাবধানে থাকিস । যার যা আছে গুছিয়ে রাখ ।

সূর্য দেবতা তখন পশ্চিমে ঢলে পড়ার মুখে । একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে ঢুকল । বড় মিস তখন গাড়ির পিছে পিছে ছূটছে । মিস আমাদের ঘরেও এসেছিলেন । আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘তুই আমার সাথে আয়’ ।

সঞ্চিতা জানেনা সে কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে ? পথে নানা উপদেশ দিচ্ছিলেন তিনি । বলেছিলেন, তোরা কেমন থাকিস তাই দেখতে এসেছেন প্রেসিডেন্ট সাহেব । ঠিক করেছি, সকলের হয়ে তুই কথা বলবি । নিন্দা মন্দ করিস না । প্রথমে নমস্কার করবি ।

মিস ডোর বেলে চাপ দিতেই দরজাটা খুলে গেল ।

মিসকে দেখেই হাজরা সাহেব কাগজ পত্রের খোঁজ নিচ্ছিলেন ।

‘সব গুছিয়ে রেখেছি । ফেরার পথে দেখাব ঠিক করেছি’,জবাব দিয়ে বলেছিলেন মিস ।

সামনে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর বয়স খুব বেশি হলে ষাটের কাছাকাছি । মনে হল তিনি একজন গণ্যমান্য মানুষ । সঞ্চিতা তাঁকে নমস্কার করতেই ভুলে গেছে । তাঁর ভয়ও করছিল । মনে মনে ভাবল মিস হয়তো তাঁকে বকাবকি করবে ।

তিনি প্রশ্ন করেছিলেন,মেয়েটি কে ?

ওঁর নাম সঞ্চিতা । আমাদের আবাসিক । সঞ্চিতা সেই সুযোগে হাজরা সাহেবকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছিল । মিস জানালেন ‘সঞ্চিতাই আপনাকে সাহায্য করবে । ওঁকে রেখে গেলাম’ । সঞ্চিতার বুক ভয়ে ঢিপ ঢিপ করছে । ঘরটা বেশ বড় । দেওয়ালে কয়েকটা ছবি টাঙানো । মনে হয় এটাও একটা অফিস ।

দুরু দুরু বুকে সঞ্চিতা তখন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে । কালের নিয়মে সে তখন যৌবনবতী । অযত্ন এবং অনাদরকে উপেক্ষা করে অনাঘ্রাতা সঞ্চিতার মধ্যে তাঁর উদ্ধত প্রকাশ ।

শান্ত স্বভাবের নরম প্রকৃতির মেয়ে সঞ্চিতা । হাজরা সাহেব তাঁকে একবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে প্রশ্ন করলেন, তুমি, তোমার বাবার নাম বলতে পারবে ?

সে মনে মনে ভাবে যার বাবাই নাই তাঁর আবার বাবার নাম ? কোনও উত্তর না পেয়ে তিনি তাঁর কাছে তাঁর মায়ের নাম জানতে চেয়েছিলেন ।

সঞ্চিতা উত্তর দিতে পারেনি ।

দেখছি তাঁদের সম্পর্কে তোমার কোনও ধারণাই নেই, বলেছিলেন হাজরা সাহেব ।

সঞ্চিতার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল । কে বা কারা যে তাঁকে এখানে রেখে গিয়েছিল তা সে জানেনা । শুনেছে তখন নাকি তাঁর চোখও ফোটেনি । প্রশ্নগুলি বেজন্মা সঞ্চিতার অসহায়তাকে যেন আরও প্রকট করে তোলে । মনে হচ্ছিল, সঞ্চিতার উড়ন্ত গ্রীবা,পুষ্ট নিতম্ব উদ্ধত বক্ষ হাজরা সাহেবকে চঞ্চল করে তুলেছে । তাঁকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে বলেছিল, মিষ্টি মেয়ে ।

সঞ্চিতার মনের গভীরে নিকষ অন্ধকারে পাথর চাপা কথাগুলি যখন এক এক করে বেরিয়ে আসছিল তখন কিশোরী সুষমার চোখমুখ কান ক্রমশ লাল হয়ে উঠতে থাকে ।

তাঁর বয়সেরও খোঁজ নিয়েছিলেন তিনি । সঞ্চিতার জবাব পেয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, এই বয়সের মেয়েদের তো এখানে থাকার কথা নয় ?

সঞ্চিতার পায়ের তলার মাটি যেন কেঁপে উঠল । তাঁর ভয়, বিয়ের নামে যদি তাঁকে আঁড়কাঠিদের হাতে তুলে দেয় । তাঁর বাজার দর মন্দ হবে না । আবাসিকে দান আসবে । নাম হবে । আড়কাঠিদের হাতে পড়া মেয়েদের নষ্ট জীবন সে টিভিতে দেখেছে । নিলমের নরক যন্ত্রণার কথাও তাঁর শোনা ।

মাসিদের অত্যাচার,বাবুদের মনরঞ্জন করা,পোষ্যদের সময়ে অসময়ে জৈব ক্ষুধা মেটানো, কতনা ঝক্কি ! এক অজানা আশঙ্কা তাঁকে পেয়ে বসল । মাথার ওপর একটা ছাদ, পেটেভাতে দুবেলা দুটো দানার বিনিময়ে সুখ বিক্রির বাজারে রূপের পসরা সাজিয়ে ঘনটার পর ঘনটা দাঁড়িয়ে থাকা । শরীরটাকে নিয়ে শত শকুনের ছিঁড়ে খাওয়া, ভাবতেই ভয়ে তাঁর চোখ দুইটি বন্ধ হয়ে আসে ।

তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, কিছু ভাবছ মনে হয় ?

সে মাথা নেড়ে জবাব দিয়েছিল, না ।

মাসিরা কেমন ব্যবহার করে ?

ভালো ।

ঠিক বলছ ? মিসরা কেমন ? আরও নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে । তাঁকে সাবধানে জবাব দিতে হচ্ছিল । সে উত্তর দিয়ে বলেছিল,আমাদের কোনও অসুবিধা হয় না ।

হাজরা সাহেব আদর করে বলেছিল,মা বাবাও তো ছেলেমেয়েদের আদর করে, তবে এত লজ্জা কেন ?

যাঁদের সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণাই নেই,তাঁদের আদর কেমন হয় তা সে জানবে কীভাবে ? তবে তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই আদর সেই আদর নয় । অন্য কিছু । ভয় তো ছিলই, তা যেন আরও বেড়ে গেল । কথাগুলি যেন তাঁকে অনেক কিছুর বার্তা দিয়েছিল সেদিন ।

তোমার কথা মিসকে বলে যাবো । সমস্যা হলে আমাকে বলবে ।

সাদা গাড়িটাকে আবার দেখা গেল । মিসের গলাও শোনা যাচ্ছে । হাজরা সাহেব বললেন,আসুন । তিনি বললেন, মেয়েটি দেখছি আপনাদের প্রশংসাই করল । ভালো মেয়ে । দেখে রাখবেন ।

মিস উত্তর দিয়ে বলেছিল, সঞ্চিতা খুব বাধ্য মেয়ে ।

তিনি আর অপেক্ষা করেননি । বলেছিলেন,আজ আর অফিসে যাওয়া হল না । কাগজপত্র ঠিক করে রাখবেন । একদিন এসে দেখে যাবো । মিস আর সঞ্চিতা অফিসের দিকে পা বাড়াল ।

সত্যিই তিনি কিছু দিনের মধ্যেই আবার এসেছিলেম । সাধারণত তিনি তাঁর আগম বার্তা আগেই জানিয়ে থাকেন । এবার তা হল না । তাঁর আকস্মিক আগমনে সকলেই ছোটাছুটি শুরু ক’রে দিয়েছিল । মিসকেও খুব অসহায় দেখচ্ছিল । অন্যান্য মিসরা তখনও এসে পৌঁছায়নি । বড় মিস সঞ্চিতাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, সাহেবের অফিসে মাসি গিয়েছে, তুইও যা । মাসি চলে আসবে । তুই থেকে যাবি । সাহেব যা প্রশ্ন করবে আগের মতো তাঁর জবাব দিস । ভয় পাস না । দেখিস সাহেবের যেন কোনও অসুবিধা না হয় ।

প্রথম সাক্ষাতেই হাজরা সাহের ক্ষমতা সম্পর্কে তাঁর একটা ধারণা হয়েছে । তার এই যে গুরুত্ব, তা সাহেবরই দুই একটা কথার ফল তা বুঝতে সঞ্চিতার অসুবিধা হয় না । তাই সে খুব সাবধানী । সামান্য ভুল তাঁর জীবনে অভিশাপ ডেকে আনতে পারে তা সে জানে ।

মাসি ফিরে যাবার সময় সাবধান করে দিয়েছিল, সব ব্যবস্থা করে গেলাম, সাহেবকে ঠিক মতো দিস । কথাগুলি বলার সময় সে যেন তাঁর দিকে কেমনভাবে তাকাচ্ছিল । কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল । সঞ্চিতা দেখল সেই গাড়িটা । সাহেবকে নামিয়েই গাড়িটা হুস করে বেরিয়ে গেল ।

সাহেব বললেন, তুমি এসেছ ? বেশ, চায়ের ব্যবস্থা করতে পারবে ?

ব্যবস্থা করাই ছিল । প্লেটে করে এক কাপ চা তুলে দিয়েছিল সে ।

চায়ের কাপ হাতে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, তোমাকে কি এখনও ফাইফরমাশ খাটতে হয় ।

না । মাথা নেড়ে উত্তর দিয়েছিল সে ।

শুনেছি মাসিরা মেয়েদের হুকুম করে, নিজেদের কাজ করিয়ে নেয় । খারাপ ব্যবহার করে । কথাগুলি বলতে বলতে তাঁকে তিনি কাছে টেনে নিয়েছিলেন, যেন সে তাঁর দখল নিতে চায় । সঞ্চিতার সামনে কেরকেট্টার পতিতা পল্লীর জীবন ভেসে ওঠে । একটা নিশ্চিত আশ্রয় তাই বা কম. কি । ত্রস্ত হরিনীর মতো সঞ্চিতার সুডৌল দেহপল্লবী তখন একে একে তাঁর দখলে । সে তখনো জানে না এই নিরাপত্তা তাঁর কাছে আর কী দাবি করে । সে নিশ্চল পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে ।

৪৫৪ প্রতীচীঅ্যাপার্টমেন্ট,
ডাবগ্রাম-১,
পোঃরবীন্দ্রসরণি,
শিলিগুড়ি-৭৩৪০০৬,
মোঃ ৯৪৩৪০৯৬৭৭৭

Leave a Reply