যমদূতকে বলেছি, আমাদের যেন দেখা না হয়
অলোক মিত্র
যখন তুমি আমাকে তোমার জীবনে আর চাইছি না- ঠিক তখনই আমাকে বুঝে নিতে হয়েছে, তোমার কাছে আমি কতটা গুরুত্বহীন কিংবা অবহেলিত অপরিচিত কেউ একজন।
অথচ, সেদিন ফিরে এসে একবুক অভিমান আর পরাজয়ের নির্মম বাস্তবতা নিয়ে আমি কেঁদেছি দীর্ঘরাত ঘৃণার অনুপাতে ; আমি নিজেকে শোকে সেদিন বিমূর্ত, নির্বাক পাথর হতে দেখেছি।
যখন জেনেছি তুমি অন্য কারোর স্বপ্নবুনন প্রেমে নিজেকে করেছো উজাড়। ঠিক তখন থেকে আমি জানতে পেলাম তোমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে অভিশপ্ত আমার জীবন থেকে।
আমি জানি, প্রেমে পড়া যত সহজ, তবে তা কাটিয়ে ওঠা এক জীবনে ততটাই কঠিন। বাদ দিলেই জীবন থেকে প্রেমিককে মুছে ফেলা যায়, তবে তার প্রেমকে নয়।
কটা মানুষ আছে, দেহ আত্মার ক্ষয় বুঝে? যারা
আসলে প্রেম করে, তারা অবশ্য অনেকেই জানে না, কাউকে ভালোবেসে জীবনে না পেলে, সে মানুষটার আর যা হোক একটা মানসিক মৃত্যু হয়, আত্মগ্লানির নানাবিধ পরাজয়ে।
মিথ্যে করে হোক, আর সত্যি করে হোক, আমি তোমাকে আর চাইছি না এটাই বাস্তব। তুমি অপেক্ষায় থেকো না!
আমি পরাজিত হতে হতে এখন বড়ই ক্লান্ত। আমি তোমাকে দ্ব্যার্থহীন ভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছি। তুমি পথভ্রষ্ট !
তুমি নষ্ট হতে হতে আর অপেক্ষায় থেকো না। এটা ভেবো না, পরজন্মে আমাদের দেখা হবে একটা অনুতপ্ত রাতের আঁধার কাটিয়ে শ্রাবণের বারিধারায়।
© অ মি/মরা গাঙ, বলেশ্বর।

রাস্তা অবরোধ
হামিদুল ইসলাম।
11.09.2022।
শব্দের আলো ফেলে ফেলে আসে
অকারণ বিকেল
নিস্তব্ধ সন্ধ্যার গায়ে লিখে রাখি
গুচ্ছ কবিতা
নৈরাজ্যের ডাকনাম ।।
সূর্যের ক্ষতে পোড়ে চেতনার মায়ামৃগ
অলীক পাতায় সাজাই
জীবনের ইস্তহার ।।
ওরা আসে
ওরা যায়
লুটেরা কথক ।।
আলো আঁধারি জোসনায়
ডুবে যায়
কার্তিকের বিষণ্ণ বলয় ।।
বিভেদের কারখানায় জন্ম নেয়
আমৃত্যু অনশন
দুচোখের জলে ভাসে লাশ ।।
আমরা আজও ভাগ করি
পিতৃঋণ
সোহাগ রাত
আমরা আজও অমাবস্যার কাছে
ঋণী থেকে যাই ।।
ফিরে আসি বারবার
জীবন যন্ত্রণা
খাঁচা ভাঙে ফনিক্স
হাজার ব্যারিকেড ভাঙে গড়ে ভূখা পেট
কালনেমীর লঙ্কায় দগ্ধ অতীত ।।
দুহাতে রাখি করতোয়া নদী
জলে ভাসে অভাবী স্রোত
সব ঘাটে নৌকো বাঁধা
অসুস্থ ঈশ্বর পাটনি আজও অনপস্থিত ।।
নেইয়ের মধ্যে কেবল নৈঃশব্দ
চিলেকোঠায় নির্জন রোদ
দুপুর গড়িয়ে যায় আমার ছেলেবেলা
জীবন ছবি হয়ে ওঠে
ভোরের পদ্ম পাতায় ।।
পূজো পূজো সুবাস
এক আকাশ জনপদ জুড়ে
গণধর্ষিতা
আমার মা ।।
লজ্জা লজ্জা লজ্জা
ঘৃণ্য মানবিকতায় গলছে পাথর
ভূখাপেটারা প্রতিদিন রাস্তা করে অবরোধ ।।
গ্রাঃ+পোঃ=কুমারগঞ্জ। জেঃ=দক্ষিণ দিনাজপুর।

বাহন
আব্দুর রহমান
বাস ট্রেন বাহন
এক একটি পৃথিবীর ছবি
বাজারের মানুষের মতন
প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে
স্বপ্ন মানচিত্র
দেখা মেলে চোখ মন পাখির গর্ভ
বাড়ি ঘর এখন বাহন
সূর্য ডাক সাগরের ফেনীল উচ্ছ্বাস
ভেসে যায় আঁধারের রচিত কর্তার বাহনে।
জন্ম দাতা
অজিত বৈরাগ্য
কখনো তুমি যোদ্ধা ঘোড়া
আমার রথের বল ।
তোমায় ছেড়ে চোখের জল
করছে টলোমল ।
স্বপ্নে তুমি আসো ঠিকি
দেওনা শুধু ধরা ।
ইচ্ছে গুলো তাই তো আমার
রয়ে যায় সব অধরা ।
তুমি থাকলে হয় তো
পূর্ণ হতো সাধ ।
বট বৃক্ষের ছাঁয়াও আমি
পেতাম বারো মাস ।
বর্ষা আসে বর্ষা যায়
নদীতে ঢেউ খেলে ।
আমার হৃদয় জুড়ে শুধু
তোমার কথা মনে পড়ে ।
তুমি আমার জন্ম দাতা
সংসারের ওই মাঝি ।
তোমায় ছেড়ে তাইতো
আমার গভীর জলে ভাসি ।
মাঝ আকাশের তারা তুমি
জোছনা রাতের বাতি ।
আমার ঘরের অন্ধকার
তাই চলছে দিবা রাতি ।
প্রত্যাগমন
জিল্লুর রহমান
আজ সন্ধ্যার বাতাস যেনো হাসছিলো
বলেছিল আমায় তুই তো বেজায় খুশি
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আবার তোদের দেখা
শত বিষাদ ভুলে এক সাথে পথ চলা।
পথঘাট বলছিল আমরা অপেক্ষায় ছিলাম
আবার তোরা আসবে ফিরে আমাদের নীড়ে
সকল কষ্ট দুঃখ ও জরা-গ্রস্ততা ভুলে গিয়ে
তোদের ভিত্তিকে নব করে গড়ে তুলতে
তোরা আসবেই কাছে, এই বিশ্বাস ছিল মনে।
মাথার উপর উড়ন্ত পাখি আমায় বলছিলো
বোকা ছেলে সেদিন তুই মন খারাপ করেছিলে
আমরা বলছিলাম তোকে, এইটা সাময়িক মনে
আবার তোরা একত্রে হবে, মনে করছিল আমারে।
রাস্তার পাশের বাসার এক বিড়াল উঁকি দিয়ে
বলতেছে মোরে, কখনো আশা হারাবার নহে
আজ তোরা আসছিস ফিরে, দুঃখ গিয়েছে ঘুচে
স্মৃতিগুলো ফেলে দে অন্ধকার কূপের মধ্যে।
সকলে বলেছিল এই তোরা আয় এক সাথে
তোদেরকে দেখে অনেক ভালো লাগে।
সারাজীবন তোরা থাক মিলেমিশে
এই প্রার্থনা করি মোরা দিনশেষে।
অবশেষে আমরা বলি এইতো ফিরে এলাম কাছে
এসো সকল বিভেদ ভুলে, আগামীর প্রত্যয়ে
ভালোবাসার বন্ধন অটুট রেখে
চলি মোরা অভিন্ন এক অধ্যায়ে।
উৎসর্গ – স্নেহের পিয়ারা
রাত, ১২:৩১;২৮ অক্টোবর,২০২১।
সাংবাদিক
অজিত বৈরাগ্য
সমাজের দপন তুমি মুখোশ ছেড়া তোমার কাজ
শত ভিড়ে রেখেছ সত্যের লাজ।
তুলে নিয়েছ হাতে মাইক্রো ফোন
ক্যামেরা বন্ধু সাথে ।
ফুঁটিয়ে তুলেছ চিত্র আপন ভঙ্গিমাতে ।
লড়েছ লড়াই জনতার স্বার্থে ।
উত্তর থেকে দক্ষিণ বিশ্বের সব কোনে
লড়েছ তুমি ভাষা হীনের ভাষা হয়ে ।
চলার পথে অনেক এসেছে বাধা
লক্ষে থেকেছ স্থির ।
তাইতো বিক্রিয়ে যাওনি জঞ্জাল ভরা
সমাজে।

ওগো মোর লালনা
জুয়েল ইসলাম
আঁধার আকাশে তুমি যে চন্দ্রিমা
কেন যে তা বোঝনা,
মনে ফুটে আছে ফুল
সে তো চন্দ্র মল্লিকা।
তুমি কি তা দেখ না,
আজ ফিরে দেখ না
ওগো মোর লালনা।
ভালোবাসা যে বুকে,
সে বুকে নেই কোন ছলনা।
কেন ডুবে আছি
তোমার ঐ চোখে বল না।
চোখে দেখেছে,
প্রেমে ভেসেছে,
মন-বাগানে শত ফুল ফুটেছে।
নীল সাগরে ঢেউ খেলেছে
গানে-গানে মনে কত সুর বেঁধেছে
হৃদয়ে গেঁথেছে বাঁধনের মেলা।
ওগো মোর লালনা
তুমি কেন বোঝনা
বোঝ না কি হৃদয়ের খেলা।
কবিতা: আক্ষেপ
কলমে: আরজু আহমেদ
তোমাকে দেখিনা কতদিন!
সেই চোখ, ভেজা চুল, ভাঙা গলা। দূরত্ব অতিক্রম করে পারি না তোমাকে দেখতে।
তোমাকে শুনিনা কতদিন!
সেই কবিতা, দুঃখী গান।
বহু দূর থেকে পারি না
যত্ন করে তোমাকে শুনতে।
তোমাকে জানিনা কতদিন!
সেই অভিমান, শখ-আল্লাদ, পছন্দ-অপছন্দ ।
এতোটা ঝাপসা মনে পারি না সবটুকু উজার করে তোমাকে জানতে।
তোরই জন্য
সুকান্ত পাল
জিতপুর। মুর্শিদাবাদ
১০/০৯/২০২২
সারাদিন মন করে উড়ু উড়ু সেই তো তোরই জন্য
এলো চুল মেলে টোল ফেলে গালে হাসলেই তুই অনন্য ।
তোর জন্যই শব্দ চয়ন স্বপ্নেও খুঁজি তোকে
স্বপ্নেই দিই চুম্বন এঁকে তোর ঠোঁটে গালে চোখে।
শুধু একবার আড়চোখে তুই চাইলেই আমি ধন্য
সারাদিন মন করে উড়ু উড়ু সেই তো তোরই জন্য।
পড়ার টেবিলে আনমন আমি সেও তো তোরই জন্য
তোকে মন দিতে এতটুকু আমি করিনিকো কারপণ্য।
সাইরেন বাজে বুকেতে আমার নিশ্বাসে নিকোটিন
ক্যানভাস জুড়ে একটাই ছবি আঁকি আমি সারাদিন ।
তোর পিছে পিছে স্টীমবোট আমি নাই কাজ কিছু অন্য
ফাঁকি দিই ক্লাস আমি বারোমাস সেও তো তোরই জন্য।
ঝর্ণা কলম
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল
গদীবেড়ো, রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
আমার ঝর্ণা কলম ছিল এক খানা
কাঠের জিহ্বা, নীব দাম সবে মিলে
পড়ে ছিল পাঁচ শিকা, ষোল আনা।
” নির্মল পেন ” সুলেখা দোয়াত কালি
বড়ি কালি আজ ইতিহাস হয়ে গেছে
ফাউন্টেন পেনের বদলে যে হরেক
রকম ডট কলমের বাহার এসেছে।
” বঙ্গ লিপি” হাতে সেলাই দিস্তা
করা খাতার জামানা আর নাই
দিন বদলের দিনেও – – –
” খাতা, কলম, মন লেখে তিন জন “
” অসি বড় না মশি বড় ” প্রবাদের বদল ঘটেছে।
মোবাইল, লেপটপ, ডেক্স টপে
কী বোর্ডে টাইপ আর হাতের স্পর্শ
সকলের মন তো কেড়েছে।
ঐ ঝর্ণা কলমটিকে খুঁজে পাচ্ছি না,
হারিয়ে গেছে যেন আজিকে কোথা
স্মৃতির পটে জাগায় বড়ই মনে ব্যথা।
হারানো দিন
লেখকঃ মোঃ নয়ন আলী
মনে পরে সেই হারানো
দিন গুলির কথা,
মাঠে ঘাটে আমরা সবাই
করিতাম খেলা।
মাঠে থাকতো গরু ছাগল
আরো থাকতো ভেরা,
তাদের কাছে গেলে মোরা
খেতাম অনেক তারা।
ঘাটে থাকতো ঝিনুক মাছ
আরো থাকতো পানকৌড়ি,
তাদের ধরে বিক্রি করে
পেতাম অনেক কড়ি।
এখন আর যাইনা মাঠে
করিনা সবাই মিলে খেলা
এখন আমরা দেখতে যাই
বড় বড় নাটকের মেলা।
যাইনা এখন আর ঘাটে
ধরিনা সবাই মিলে মাছ,
এখন আমরা যাই সকালে
অফিস ও ক্ষেত করতে চাষ।
দুঃখ-দৌড়ে আহ্বান
কবিতাকার
ফুলের সব ভালোমন্দ
সুবাস সৌন্দর্য টাকার পুরুত্বের উপর
গন্ধ বিলায়ে সতীত্বগুরুত্ব হারায়,
শুভেচ্ছার সবটুকু সড়ক
আজকাল মুখের মধ্যে সীমাবদ্ধ;
হৃদয়ের দুর্গম দোলনা থেকে
আশির্বাদ কিছুই আনে না এখন আর।
ভালো চাওয়ার মধ্যে ইদানীং
চালবাজের চক্রান্ত চুপটি করে বসে থাকে
আনমনে সুযোগে সাবধানী,
চোরের চোখ সেখানে পাহারা দেয়
পুষ্পপ্রাণ হৃদনিরুপম পসরা।
অভিবাদকের আড়ালে মুগ্ধমনে হাসে
নীরব নিষ্ঠুর আশির্বাদক-আততায়ী!
তাই আগুনাহত পাথরপথে
শুধু তোমার জন্য অপেক্ষা করছি
স্রোতসড়কের শিরে, আশাকৃষ্ট বুকে।
সাঁতারু বোমারুর মতো তো নয়
বন্ধুরবিছানাবুকে প্রতিদিনের পথিকের মতো
হেঁটে হেঁটে আমাকে হাঁটাতে পারলেই
অনেকের চোখে আমিও বড় বেশি খুশি
তোমাকে দুঃখ-দৌড়ে আহ্বান!
সবার মনে
কবিতাকার
চেহারাটা গোলগাল
গাছে এক মস্ত তাল,
বদনখানি ঝলমল
আলোভরা টলমল
হাসছে সে গলগল
চাঁদ যেন জ্বলজ্বল,
মায়ের হাতে করতাল
মাথা তার, গোলগাল!
পা পা করে হাঁটে
হা করে সে ছুটে,
পড়ে যাচ্ছে বটে
মায়ের বাহুপুটে।
ঠোঁট মিলায়ে ঠোঁটে
আবার দৌড়ে ছুটে
অল্পপানি যে ঘটে
ছলাৎ ছলাৎ ফুটে,
ভারসাম্য নেই মোটে
যেতে চায় তো রোটে
কী জানি,কী না ঘটে?
চলেই সে এলোমেলো
তাকায় তো টলোমলো
যাবে কোথা,কোথা গেল–
পিছনে কেনই তাকালো?
মায়ের ডাকে জোর দৌড়ালো
দাঁতের ভাষায় খিলখিলালো
শুধু শুধু ঘামকে ঝরালো
সবার মনে ফুল ফুটালো!
ওরা বলতে চাই
মহ:আরিফ
কথা তো সবাই বলে
শোনার জন্য মন লাগে
ওরা কিছু বলতে চাই
শোনার জন্য সময় লাগে
কথা বলে
বয়ে যাওয়া বাতাস
কথা বলে
সকালের সূর্য
কথা বলে
গভীর রাতের অন্ধকার
কথা বলে
আকাশের মেঘাছন্ন
কথা বলে
সমুদ্রের ঢেউ
কথা বলে
বৃষ্টির ফোঁটা
কথা তো সবাই বলে
শোনার জন্য মন লাগে
ওরা কিছু বলতে চাই
শোনার জন্য সময় লাগে।
চলো না শোনা যাক
ওরা কি বলতে চায়
চলো না একটু গিয়ে শুনে আসি
ওরা কি বলতে চায়???