PULAK MAJUMDER

PULAK MAJUMDER

বীর শিবাজী – ৪

পুলক মজুমদার

সুপ্রশিক্ষিত ঘোড়া রণবীরের পিঠে চেপে প্রতাপগড় দুর্গ শীর্ষ থেকে নেমে এলেন শিবাজী। রনবীরের কানে অস্ফুট স্বরে কিছু বললেন যেন। তারপর পরম যত্নে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সঙ্গীদের নিয়ে চললেন সাক্ষাতের জন্য নির্দিষ্ট তাবুতে।

তাবুর কাছে এসে শিবাজী থমকে দাড়ালেন। রাজেকে দেখতে পেয়ে তাবুর ভিতর থেকে এগিয়ে এল পন্তাজী। শিবাজী মৃদু স্বরে পন্তাজীকে বললেন –
-আফজাল খানের পাশ থেকে রক্ষীদের দূরে সরে যেতে বল। আমি একা খা সাহেবের সাথে দেখা করব।
পন্তাজী গিয়ে আফজাল খানকে বলতেই তিনি হাত ইশারায় দুজন দেহরক্ষী ও দেওয়ানকে দূরে সরে যেতে বললেন। তিনজনেই সরে গিয়ে তাবুর পিছনের দরজায় সতর্ক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে রইল।

আশি ফুট সুসজ্জিত তাবুর ঠিক মাঝখানে বসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। শিবাজী দেখলেন নরম সুকোমল গদীতে পরম আয়েশে বসে রয়েছে আফজল খান। ধীর পায়ে তাবুতে প্রবেশ করলেন শিবাজী। শিবাজীকে দেখতে পেয়ে উঠে দাড়াল আফজাল খান। সন্তোষের ভঙ্গিতে ভরাট গলায় বলে উঠল –
-এসো শিবাজী। তোমায় দেখে মন ভরে গেল।

খানের চোখে মুখে স্নেহের ছাপ। যেন অনেক বছর পর কোন নিকট আত্মীয়ের সাথে সাক্ষাৎ করছেন। শিবাজী ও চেহারায় কোমল ভাব জাগিয়ে এগিয়ে গেলেন। দুহাত সঠান প্রসারিত করে দরাজ গলায় আফজাল খান বললেন –
-আমার প্রতিক্ষা সফল হল। অবশেষে তোমায় দেখতে পেলাম।
শিবাজী লক্ষ্য করলেন খান সাহেবের কোমরে তলোয়ার ঝুলছে। বাহুর উষ্ণ আলিঙ্গনে বাধা পড়লেন শিবাজী। পরক্ষনেই বাম হাতের শক্ত আলিঙ্গনে ধরে রেখে ডান হাতে কোমরের পিছনে বিশেষ কায়দায় রাখা ধারালো ছোরা নিয়ে চোখের পলকে শিবাজীর ডান পাজঁরে আঘাত করল। কিন্তু গায়ে পোষাকের নীচে লোহার বর্ম থাকায় ছোরা লক্ষ্য বিদ্ধ না হয়ে ছিটকে গেল।

এদিকে বাহুর তীব্র পেষনে শ্বাস কষ্ট অনুভব করছেন শিবাজী। না আর দেরী নয়। বাম হাতের তালু প্রসারিত করে ধাতব বাঘ নখর দিয়ে সজোরে আফজাল খানের পেটে টান দিল শিবাজী। কিছু বুঝে উঠার আগেই বাঘ নখের তীব্র আঘাতে আফজল খানের পেট চিরে নাঁড়ি ভুড়িঁ বেরিয়ে এল। অসহ্ন্য ব্যথায় চীৎকার করে বাহু বন্ধন শিথিল করে পেটে হাত চেপে বসে পড়ল আফজল খান।
এই সুযোগ। ডান হাতের আস্তিন থেকে বিষ মাখানো বিছুয়াটা নিয়ে সোজা গেথে দিল আফজাল খানের কণ্ঠনালীতে। রক্তাক্ত আফজাল খান বলি হওয়া পশুর মত মেঝেয় গড়াগড়ি খেতে লাগল।
পুরো ব্যাপারটা ঘটল এক লহমায়। চল্লিশ ফুট দূরে দাড়িয়ে থাকা সৈয়দ বান্দা ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে এসে সজোরে শিবাজীর মাথায় তলোয়ার দিয়ে আঘাত করল। তলোয়ারের আঘাতে মাথায় পাগড়ির নীচে থাকা ধাতব কড়াইটা দুমরে গেল। কিন্তু মাথা অক্ষত রইল।

দূর থেকেই জীব মহালা একটা তলোয়ার ছুড়ে দিল শিবাজীর দিকে। শিবাজী তলোয়ার দিয়ে সৈয়দ বান্দাকে ঠেকাতে লাগলেন। এই অবসরে জীব মহালা পাশে সরে গিয়ে এক কোপে সৈয়দ বান্দার তলোয়ার ধরা হাত কেটে ফেলে। ঘটনার ঘনঘটায় হত বিহ্বল সৈয়দ বুঝে উঠার আগেই জীব মহালার তলোয়ার তার মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দিল। সৈয়দ বান্দার বিছিন্ন কবন্ধ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এল। তার ছিন্ন শির গড়িয়ে কয়েক গজ দূরে গিয়ে স্থির হল।
দ্বিতীয় রক্ষী শিবাজীর সাথে লড়াই করে প্রাণ দিল। ওদিকে শম্ভুজী তলোয়ারের ঘায়ে আফজাল খানের মাথা আলাদা করে শিবাজীর কাছে নিয়ে এল।

এক হাতে আফজাল খানের ছিন্ন মস্তক অন্য হাতে রক্তাক্ত অসি নিয়ে তাবু থেকে বেরিয়ে এল শিবাজী। পাহাড় চূড়া থেকে কিছুটা নেমে খুব জোর গলায় দুবার নেকড়ের ডাক দিল। প্রভুর সংকেত কানে যেতেই পাহাড়ী জঙ্গলের গাছ গাছালির আড়াল থেকে বেরিয়ে এল রনবীর।
প্রিয় অশ্ব কাছে আসতেই তার পিঠে চড়ে বসল শিবাজী। বাম হাতে ঝোলানো আফজাল খানের শির থেকে গড়িয়ে পড়ছে ফোটা ফোটা রক্ত। সুশিক্ষিত ঘোড়া প্রতাপগড় দুর্গ শীর্ষে দ্রুত গতিতে এগোতে লাগল।

(ক্রমশ)

Leave a Reply