
পথে হত
কবিতাকার
মা
জানি মা,তুমি রান্নাঘরেই প্রথমে আসবে। আমি আজ সকালে নাস্তা খাবো না। কবে খাবো জানি নে? চিঠিটা রান্নাঘরে বেলুনের সাথে বেঁধে রেখে গেলাম।রুটি বানানোর সময় দেখতে পাবে তুমিই প্রথমে। বুয়া আসবে সে-ই দশটায়।বাইরে তালা দিয়ে গেলাম,যাতে তোমাদের সম্পদ ও সম্মান সংরক্ষিত থাকে।কিছুই নিয়ে যাই নি, এমনকি মোবাইলটা নয়।তবে মোবাইলের চেয়ে প্রিয় কারোর কাছে যাচ্ছি কিনা, ভেবে দেখো? আমার জন্য চিন্তা করো না। বলবে, চাইলে কি চিন্তা না করে থাকা যায়? মা সন্তানের জন্য সর্বদাই চিন্তা করবে, এটাই তার স্বীকৃত স্বভাব। এখানে কিছু করার মতো অবস্থায় ও অবস্থানে নেই আমি। বাবাকে আর কী বলার আছে? বাবা আমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বললেন, যেদিকে খুশি চলে যাও,যা খুশি করো। তা-ই করলাম।
চিঠিটা রেখে ময়না খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। দোয়েল যেখানে আসবে, সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ময়না।আজ থেকে সে দোয়েলের দিলে মুক্তাকাশে মিলেমিশে উড়বে একসাথে।সুবহে সাদেক, চারদিকে আল্লাহর আহ্বান ভাসছে। দোয়েল কি আমার আহ্বান ভুলে গেলো, আহ্বান তো তার দ্বারাই উত্থাপিত? আমি পালনের পথে, সে প্রতিপালন করবে না, এমনটি হতে পারে না — মনে মনে ভাবছে এসব ময়না? ওয়েটিং রুমে, কাউন্টারের লোকটি জিজ্ঞেস করলো কয়টার গাড়িতে যাবেন, আপা? বন্ধুরা আসুক, তারপর টিকেট করবো, জানালো সে।
আপা, গাড়ি আসতে দেরি হতে পারে। শুনছি সামনে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, ঝামেলা হচ্ছে।আগে টিকিট কেটে রাখেন। পরে নাও পেতে পারেন, বললো লোকটি। নিজের ঝামেলার মধ্যে অন্যের ঝামেলা নিয়ে ভাবার সময় নেই ময়নার।তাই সে নিশ্চুপ থাকলো। লোকটি যাত্রীর সাথে বলছে যে,একটা ছেলে হঠাৎ দৌড়ে গাড়ির নিচে এসে পড়ছে, হাসতাপালে নেয়া হয়েছে। কোনকিছুই ভাবতে পারছে না ময়না, শুধু অপেক্ষা করছে সে। অভিমান না করে মোবাইলটা নিয়ে আসলে ভালো হতো ময়নার ধারণা। অন্য একজন মহিলার মোবাইল দিয়ে ময়না দোয়েলের নম্বরে ফোন দেওয়াতে একটি লোকটি বললো, ভালোই হয়েছে আপনি ফোন দিয়েছেন, আপনি কোথায় আছেন? বলুন আমরা আসছি। ঠিকানা বলার সাথে সাথে ঐ লোকটি ফোন রেখে দিলো।
ময়নার মন উত্তেজিত হতে থাকলো। বিপদে পড়বে কিনা বা পালিয়ে যাবে কি? ভেবে পাচ্ছিলো না। তারপর দোয়েল আসলো, সাথে তার রুমমেট। আশ্চর্য কীভাবে জানালো তার রুমমেট ? হয়তো কেউ খবর দিয়েছে। দোয়েল কি অভিমান করেছে, তার সাথে কথা বললো না? ময়না তার রুমমেটকে বললো, সে তো ঘরে ফিরে যাচ্ছে, আমি–! দোয়েলের রুমমেট সান্ত্বনার সুরে বললো,আমি সব জানি; ওর সৎকার হয়ে যাক।আপনি পথ পাবেন।আপাতত কারো বাসায় দুই একদিন থাকুন।ময়না নিথর হয়ে বসে থাকলো।কোন উত্তর দিলো না।নীরব নয়নের নীর নীড়হারা পাখির মতো শুধু ভাসছিলো। পলায়নপর প্রেমিক পথেহত হয়ে উপস্থিত হলে, প্রেমিকার বক্তব্য আর কী-বা হতে পারে?