পালের নৌকা
কবিতাকার
নাও ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে
ছল ছলাইয়া চলুক রে নাও মাঝ দইরা দিয়া
-গিরীণ চক্রবর্তী
উজ্জীবিনীমূলক গানে যেমন পালের নৌকা সাহস সঞ্চারের উপকরণ, তেমনি বাঙালির প্রেম,বিরহ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পালের নৌকার প্রসঙ্গ জড়িত।নদীর বুকে জেগে উঠা পলল ভূমির বাসিন্দা, বাঙালির জীবন-জীবিকা, স্বপ্ন-সাধ সব কিছু নদী ও এর বুকে বহমান বহিত্রকে কেন্দ্র করে -এই কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। নৌকাকে বায়ুর সাহায্যে চালিয়ে নেয়ার জন্য নৌকায় পাল বা বাদাম ব্যবহার করা হতো।
পালের কাপড় মাস্তুলের সাহায্যে খাটানো হতো। মাস্তুল হলো শক্ত বাঁশের বা কাঠের তৈরি সোজা লম্বা দণ্ড। এই পাল এক ঘণ্টি,দুই ঘণ্টি,আবার তিন ঘণ্টিও হতো। মাস্তুলে কাঠের কপিকলের মাধ্যমে রশি বেঁধে টেনে পাল উপরে তোলা হতো । এক ঘণ্টি,দুই ঘণ্টি ও তিন ঘণ্টি বাদামে মাস্তুল বাদামের মাঝ বরাবর থাকতো। আরেক ধরনের বাদাম ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় ব্যবহার করা হতো।মাস্তুলে বাদামের এক পাশ বাঁধা থাকতো। নৌকার এক পাশে খাটানো বাদামের কোণার ভারসাম্য মাঝি রশির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতো বলেই হয়তো এমন নামকরণ হয়েছে কানি বাদাম।
নৌযানে ইঞ্জিন প্রচলনের পূর্বে জাহাজ ও নৌকা পাল,দাঁড় কিংবা গুণের সাহায্যে চলতো। ভাটির দিকে ভেসে যাওয়ার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হতো।সাগর বা বড় নদীতে চলতো পালের জাহাজ। আমাদের দেশে নদী খাল বিল হাওড়ে পালের নৌকার বহুল প্রচলন ছিল। অন্যের ঘাড়ে চরে চলা গেলে দাঁড় বেয়ে বা গুণের ঘানি কে টানে?শুধু মালামাল পরিবহণের জন্যই নয়,যাতায়াতের উপায় হিসেবে এর ব্যবহার ছিল চোখের পড়ার মতো। জমিদারি দেখাশুনা, ভ্রমণ,আত্মীয়ের বাড়িতে গমনাগমনের জন্য পালের নৌকা প্রচলিত ছিলো প্রিয় মাধ্যম হিসেবে।
এখন যেমন গাড়ি হচ্ছে আভিজাত্যের প্রতীক,তেমনি নৌকা দ্বারা জমিদারের রুচি নির্ণীত হতো। রাজা নবাব জমিদারের পানসী,গয়না, বজরা প্রভৃতি নৌকা থাকতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৌকায় চরে প্রকৃতির শুভা উপভোগ করতেন। নৌকা উদ্ভাবনের পরপরই বোধ হয় পালের প্রচলন হয়েছিলো। আলিফ লায়লা কাহিনির সিন্দাবাদের তৃতীয় সমুদ্র যাত্রায় রয়েছ-‘-দিনক্ষণ দেখে আল্লাহ নাম নিয়ে একদিন জাহাজে চেপে বসলাম আমরা।
পালে হাওয়া লাগল।জাহাজ চলতে থাকল।’ আমাদের কল্পনার রাজ্যেও সুদৃশ্য নৌকার আকাঙ্ক্ষা সুপ্ত ছিলো। এজন্য দেশে প্রচলিত রূপকথায় নৌকায় বাণিজ্যে যাবার আয়োজন রয়েছে। রূপকথার ময়ূরপঙ্খী নাও পরবর্তীকালের সাহিত্যকেও প্রভাবিত করেছে। আশরাফ সিদ্দিকী’র বাণিজ্যেতে যাব আমি কবিতায় দেখতে পাই–
মাগো আমায় দাও সাজিয়ে ময়ূরপঙ্খীখানা
মাগো আমি আজকে তোমার শুনবো না আর মানা।
ট্রয়যুদ্ধে এক হাজার পালের জাহাজ সম্বলিত গ্রীক নৌবহরটি উত্তরবায়ু প্রবাহে গন্তব্যে যেতে মুসকিলে পড়ে।সেনাপতি তার কনিষ্ঠা কন্যা ইফিজিয়ানকে উৎসর্গের মাধ্যমে গন্তব্যে যাওয়ার অনুকূল বায়ুপথ খুঁজে পায়।১৮০৫ সালের ২১অক্টোবর অনুষ্ঠিত ট্রাফালগারের যুদ্ধে বৃটিশ নৌবাহিনী প্রতিক্ষপকে ঘায়েলের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রামে তৈরিকৃত পালের জাহাজ ব্যবহার করেছিলো,ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেয়। ইতালিয়ান নাগরিক কলম্বাস স্পেনের রানির সহায়তায়১৪৯২ সালে তিনটি পাল-তোলা জাহাজে যাত্রা করে ভুলক্রমে আমেরিকা মহাদেশের কিউবা উপকূলে উপস্থিত হন,যা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার নামে অভিহিত। পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা গুজরাটি মুসলমান নাবিক মজিদের সাহায্যে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করেন।
তিনি তিন মাস্তুলওয়ালা জাহাজে পালের মাধ্যমে মৌসুমি বায়ুপথ ধরে ধীরে ধীরে ভারতে পৌঁছেন। এমনিভাবে পালের জাহাজ কিংবা নৌকায় করে কালে কালে এদেশে আসেন আরবীয় পর্তুগিজ ওলন্দাজ ফরাসি ডেনিশ ও ইংরেজরা। ইসলাম খান বারভূঁইয়ার কর্তৃত্ব পাশ কাটিয়ে ঢাকা দখলের সময় বিশাল নৌবহরের সহায়তা নিয়েছিলেন। অনুমান করা যেতে পারে ঐ নৌবহরের নৌকাগুলো চালানোর জন্য অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি পাল তোলারও ব্যবস্থা ছিলো।
মধ্যযুগের মনসামঙ্গলের কাহিনির চাঁদ সওদাগরের বার ডিঙা বহরে হয়তো পালের ব্যবস্থা ছিলো। বাতাসের মাধ্যমে চলতে পারলে মাঝিরা গা খাটিয়ে নৌকা চালাবে না,সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।ইংরেজ কুখ্যাত জলদস্যু এডওয়ার্ড টীচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আমেরিকার পূর্ব উপকূলে পালের জাহাজে গিয়ে সর্বস্ব লুট করে ফিরে আসত। ইউরোপীয় দুর্ধর্ষ ভাইকং উপজাতি পালের জাহাজের সাহায্যে বিভিন্ন দেশে লুণ্ঠন, অত্যাচার চালাতো। পর্তুগিজ হার্মাদ,মগ,
মারাঠারা এদেশের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে পাল তোলা নৌযানের সহায়তায় ডাকাতি করতো।
ইবনে বতুতা বাংলাদেশে পালের নৌকায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় লিখেছেন–‘আমরা পনের দিন নদীর দুপাশে সবুজ গ্রাম ও ফল ফলাদির বাগানের মধ্য দিয়ে নৌকায় পাল তুলে চলেছি;মনে হয়েছে যেন আমরা কোনো পণ্যসমৃদ্ধ বাজারের মধ্য দিয়ে চলছি।’ হিউয়েন সাং,ফা হিয়েন এদেশে নৌপথে ভ্রমণ করেছিলেন, তাদের বহনকারী নৌকায় পাল থাকা অসম্ভব কিছু না।
নদী নৌকা আমাদের জীবনের অন্যতম ভাবনার অংশ।
বাতাসের অনুকূলে নৌকা চালনার মাঝিকে মৌসুমি বায়ুর গতি-প্রকৃতি জানতে হতো। কালক্ষেপণ করে হলেই বায়ুপথ ধরে ভাটিয়ালি গান গাইতে গাইতে গন্তব্যে রওয়ানা হতো। নৌকা ও পাল আমাদের আনন্দ অনুভূতি, চাওয়া পাওয়ার অনুষঙ্গ হয়ে ছড়ায় দেখা দিয়েছে। পালের নাও নিয়ে অনেক প্রচলিত ছড়া রয়েছে।এগুলোর রচয়িতার নাম জানা যায় না–পালের নাও,পালের নাও/পান খেয়ে যাও/বউ যাবে বাপের বাড়ি/তারে নিয়ে যাও। প্রচলিত আরেকটি ছড়ায় বউয়ের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য রয়েছে–পাল তোলা এই নায়ের মাঝি /ভাটিয়ালি গায়/ঘোমটাপরা গাঁয়ের বধু/শ্বশুর বাড়ি যায়। মো.হারুন অর রশিদের একটি ছড়ায় পালের নৌকার হৃত স্মৃতি ফুটে উঠেছে-
পাল তোলা নৌকা দেখে
খোকা ডেকে বলে,
মাঝি মাল্লা নেই যে তোমার
কোথায় গেছে চলে?
কবি শান্তুনুর স্বপ্ন-নিঝুম নামক ছড়ায় আছে–
পাল ছেঁড়া এক/আশা তরী
ভাঙা মাস্তুল/আকঁড়ে ধরি।
পাল ও মাস্তুলের দুর্দিনের ছবি এখানে অঙ্কিত হয়েছে।কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভোর হল নামক ছড়ায় পালের নৌকা সকালে তার যাত্রা শুরু করছে–
খুলি হাল,তুলি পাল
ঐ তরী চলল।
সাহিত্যের অন্যান্য শাখাতেও পালের নৌকার উপস্থিতি কম নয়।মৈমনসিংহ গীতিকার মহুয়া পালা অংশে বর্ণিত হয়েছে–
পক্ষী নয়, পক্ষীয় নয়রে উড়াইয়া দিছে পাল
এই সে নৌকায় উঠ্যা যাইবাম যা থাকে কপাল।
আধুনিক যুগের গোড়াতে কৃষ্ণকমল(১৮৫৮)-এ উদ্ধৃত আছে–পালগুলি ফরফর ইত্যাকার নিনাদযুক্ত হইল।
কৃষ্ণভাবিণীতে (১৮৮৫)বর্ণনা রয়েছে–জাহাজ পরিষ্কার, পাল তোলা, নঙ্গর ফেলা ইত্যাদি কাজ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানেই গতি। তিনি পালের নৌকাকে তার সাহিত্যে গতির প্রতীক হিসেবে এঁকেছেন–চারদিকে জলে ডিঙি ও পালের নৌকা। যোগাযোগ উপন্যাসে চরিত্রের অবস্থা বুঝানোর জন্য পালের জাহাজের প্রসঙ্গ টেনেছেন–মুকুন্দলাল,যেন মাস্তুলভাঙা,পালছেঁড়া, টোল খাওয়া,তুফানে আছাড় লাগা জাহাজ,সসংকোচে বন্দরে এসে ভিড়লেন। বিশ্বকবির অসংখ্য লেখায় পাল নৌকার উপমা চমৎকারিত্বে উদ্ভাসিত হয়েছে।সেঁজুতি কাব্যে বাংলার অপরূপ দৃশ্য পালের নৌকায় চলমান থেকে অবলোকন করেছেন।
তীরের পানে চেয়ে থাকি পালের নৌকা ছাড়ি–
গাছের পর গাছ ছুটে যায়,বাড়ির পর বাড়ি।
ভাললাগা,ভালোবাসা পিছু টানে কিন্তু পালের নৌকায় বহমান। পোস্টমাস্টার ছোটগল্পে নায়কের আত্মভাবনায় তা সক্রিয়–কিন্তু তখন পালে বাতাস পাইয়াছে,বর্ষার স্রোত খরতর বেগে বহিতেছে,গ্রাম অতিক্রম করিয়া নদীকূলে শ্মশান দেখা দিয়াছে;তাই রতনের জন্য পোস্টমাস্টারের ফিরে যাওয়া কিংবা সঙ্গে করে নিয়ে আসার ব্যাপারটি মনে মধ্যে চেপে যেতে হলো।জগৎ বড়ই জটিল,সেখানে কর্মীর জায়গা নেই,কর্মের মূল্যায়ন। সোনার তরী কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নিষ্ঠুর সত্যের মুখোমুখি হয়েছেন।মহাকাল রূপী পালের নৌকা কবিকে তরীতে স্থান দেয় না–
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দুধারে
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
দুর্দিনে কাণ্ডারিকে শক্ত হাতে জাতির হাল ধরার প্রেরণা কাজী নজরুল ইসলামের কাণ্ডারি হুঁশিয়ার কবিতায় পালের নৌকার প্রতীকে উল্লিখিত হয়েছে—
দুলিতেছে তরী,ফুলিতেছে জল,ভুলিয়েছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল,কে ধরিবে হাল,আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান,হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
মুসলমানদের পারলৌকিক সফলতার ছবি চিত্রিত হয়েছে কবির খেয়াপারের তরণী কবিতায়–
শাফায়েত-পাল-বাঁধা তরণীর মাস্তুল,
জান্নাত হতে ফেলে হুরী রাশ রাশ ফুল।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় পাল তোলা নৌকার মাধ্যমে আবহমানকালের বাংলার রূপের রূপায়ন ঘটেছে–
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙা বায়;রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতায় পাল,মাস্তুল,জাহাজ ভিন্ন এক আবহ সৃষ্টি করেছে-
মাল বয়ে বয়ে ঘাল হলো যারা আর যাহাদের মাস্তুল চৌচির
আর যাহাদের পাল পুড়ে গেল বুকের আগুনে ভাই
সব জাহাজের সেই আশ্রয় নীড়।
ফররুখ আহমদের কবিতায় পাল তোলা জাহাজ মুসলিম জাতির মুক্তির দিশারীর বার্তাবাহক —
বুঝি কুয়াশায়,জোছনা-মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।
সাত সাগরের মাঝি কবিতায় কবি মাঝিকে জাহাজের পাল তুলে স্বাধীনতার সোনালি সোপানের উদ্দেশে যাত্রা করতে উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন–
আজ তোমার পাল ওঠাতেই হবে
ছেঁড়া পালে আজ জুড়াইতে তালি,
ভাঙা মাস্তুল দেখে দিক করতালি
তবুও আজ জাহাজ ছোটাইতে হবে।
বাস্তববাদী লেখক শওকত ওসমানের নতুন জন্ম গল্পে দুর্যোগে পাল তোলা নায়ের নাজেহাল অবস্থার বিবরণ এসেছে–এক হাতে পালের দড়ি ধরেছিল সে।কাফ্রি-সম্রাট যেন স্যালুট নিচ্ছে তাবেদার ফৌজ মহলে কিন্তু ইতিমধ্যে বাতাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠল–ফরাজ আলি তাড়াতাড়ি পাল নামিয়ে ফেলল।এত বাতাসে ছিঁড়ে যেতে পারে।
ইসলামিক গানেও পালের নৌকাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর আহবান রয়েছে —
দে দে পাল তুলে দে মাঝি হেলা করিস না
ছেড়ে দে নৌকা আমি যাব মদিনা।
বিরহের গানে পালের নৌকার উপস্থিতি অত্যন্ত বাঙ্ময় হয়েছে
কবি জসীমউদদীন এর রঙিলা নায়ের মাঝি গানের সংকলনের নিম্নোক্ত গানে রয়েছে–
পুবালী বাতাসে তোমার নায়ের বাদাম উড়ে
আমারও শাড়ির অঞ্চল ঐ ঝলমল করে।নিচের গানেও পালের নৌকার উপস্থিতি আছে–
ওরে ও নায়ের মাঝি, পাল তুলে চলে আজি।
আধ্যাত্মবাদ বুঝাতে পালের নৌকার ব্যবহার দুর্লভ নয়।ভাঙা তরী ছেঁড়া পাল/চলবে আর কতকাল।ভাটিয়ালি গানে পালের নৌকার মাঝিকে সাবধান হতে বলেছেন–মাঝি নিমিষে গুটাইও সামনে ধরিও হাল/তাড়াতাড়ি দিও পাড়ি বৈঠা তে।
লালন ফকিরের দেহাত্মবাদে নৌকা কি এড়িয়ে যেতে পারে?
এই দেহের মাঝে নদী আছে
সেই নদীতে নৌকা চলছে
ছয় জনাতে গুণ টানিছে
হাল ধরেছে এক জনা।
পথিক নবীর গানেও নৌকা আধ্যাত্মিকতার বাহন–
সেই ঢেউয়েতে ভেসে ভেসে নৌকা হেতায় এলাম শেষে।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের শিল্পী হয়ে উঠার পিছনে শৈশবের স্মৃতিতে সক্রিয় ছিল কাশফুল, নদী,পালতোলা নৌকা প্রভৃতি।
জয়নুল আবেদীনের আঁকা নৌকা শিরোনামের জল রঙের পালবিহীন মাস্তুলওয়ালা নৌকাটি নদীর উপকূলে বালিতে স্থির। শিল্পাচার্যের আঁকা এই ছবি বর্তমানে পালের নৌকা ভবিষ্যৎ নির্দেশক। এখন জাদুঘরে ছাড়া নদীতে পালের নৌকার দেখা মেলা ভার।
অথচ শিশুকে গ্রাম বাংলার বেষ্টিত ছবি আঁকতে বললে কল্পনার সাহায্যে পালের নৌকা নদীতে ভাসছে এমন ছবিও আঁকে।তেল চালিত নৌকা জলের পরিবেশ নষ্ট করছে।ক্ষতি হচ্ছে জলজ প্রাণীর। যন্ত্রচালিত নৌকায় শব্দ দূষণ,বায়ু দূষণ ও পানি দূষণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসম্য বিনষ্ট করছে। ছোট ছোট পালের নৌকা বয়ে চললে পুরানো পরিবেশের পাশাপাশি সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের সাথে নতুন প্রজন্মের পরিচয় হতো। জানার আগ্রহে সদা তৎপর শিশুদের জাদুঘরমুখিতা থেকে ফেরাতে পালের নৌকার প্রচলন রাখা জরুরি,জীবনের জন্য নাহোক,ঐতিহ্যের জন্য পুরোনো জীবনের প্রতি পা বাড়ানো উচিত নয় কি?