Satyen Mondal

সত্যেন মন্ডল

রম্য রচনা

ছন্নছাড়া খেয়ালী সংঘের ভাবলুদা

সত্যেন মন্ডল

   ( দ্বিতীয় পর্ব  এবং শেষাংশ )

এদিকে আরো জনা চারেক সদস্য ক্লাব ঘরে প্রবেশ করতে থাকে ; তাদেরই একজন বলতে থাকে ,ভাবলুদা এ বছর ফান্ডের অবস্থা খুব খারাপ, পূজা করা যাবেতো ? ভাবলুদা গম্ভীর ভাবে বলেন, “মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয় / আড়ালে তার সূর্য হাসে।” হরেন ক্ষেপে গিয়ে বলে, তুমি বলবেনা কেন ? তুমি কি কখনও বিল বই নিয়ে চাঁদা কাটতে গেছো ? তুমিতো মুখে মারিতং জগতঃ ! সভাপতি হয়ে বসে আছো ! হরেনের সংস্কৃতে জ্ঞান এবং বাচন ভঙ্গিতে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে ।

ন' কাকা হরেন কে বলে, তুই ঠিক কি বলছিস ? যাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো বলা হয়েছে,সেই ভাবলুদার অভিব্যক্তি, কি বলেছে,যেন উনি শোনেননি আর শুনলেও বাম কান দিয়ে সেটা ঢুকে সঙ্গে সঙ্গেই সেটা ডানকান দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ব্যাজার মুখে ডান ঠ্যাংটা চেয়ারে তুলতে তুলতে বললেন,  "মাটিতে যাদের ঠেকেনা চরণ  / মাটির মালিক তারাই হন । " এবার হরেন ভাবসম্প্রসারণ ছুড়লেন ,  " কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে /কভু আশী বিষে দংশেনি যারে  ?"

আমি যে কি সমস্যায় পড়েছি ,ভাবলুদা বুঝবে কি করে ? যে থেকে ক্লাব ঘরে ঢুকেছি সেই থেকেই জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছেন, আর তোরা আমার বন্ধু ? আমার দুর্দশা কষ্ট সমস্যার দিকটা খেয়াল রাখিস ?
ভাবলুদা অভয়বাণী দিয়ে বলেন, “দৈন্য যদি আসে আসুক, / লজ্জা কিবা তাহে ? / মাথা উঁচু রাখিস /সুখের সাথী মুখের পানে / যদি নাহি চাহে /ধৈর্য ধরে থাকিস। “
খগেন চিৎকার করে বলে, তোমরা এই সব বাজে কথায় ডুবে থাকবে ? না মিটিং শুরু করবে ?

ন’কাকা বলে,হ্যাঁ রে বাবা ! শুরু হবে,দাঁড়া আরও কয়েক জন আসুক, এই সময় দেখি ঝন্টুদা বলে একজন বারে বারে খগেনের পকেটের দিকে হাত নিয়ে যাচ্ছে আর খগেন শরীরের সব বল প্রয়োগ করে দু হাত দিয়ে, ঝন্টুর হাত সরিয়ে দেবার মতো করছে। ব্যাপার কি ? ঝন্টু পাশের পাড়ার একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছে, মেয়েটি কলেজে পড়ে এবং কাল তার পরীক্ষা।খগেন মটর সাইকেল ধার দিলে কাল ঝন্টু মেয়েটিকে কলেজে পৌঁছে দিতে পারবে, মেয়েটির কাছে একটু ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারবে,খগেনের কথায় , রং মারতে যাবে তুমি, আর মোটর সাইকেল ধার দেবো আমি ?

বন্ধুইতো বন্ধুর উপকার করে ! ধার দে মোটরবাইক, খগেন গজ গজ করতে করতে বাইকের চাবি দেয়। হ্যারা তুই কি নির্লজ্জ ! নিপিত্ত !

তোর এই রকম চাইতে লজ্জা করেনা ? ঝন্টুর মুখ দেখে মনে হল, ” যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ। ” এই মন্ত্রে সে বিশ্বাসী, তোরা যে যা বলিস বল,আমি পিঠে বেঁধেছি কুলো আর কানে দিয়েছি তুলো, লজ্জা শরম নাই, তার এখন একটাই চিন্তা ,মিটিং শেষ হলে কখন ক্লাবের সামনে থাকা খগেনের মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ি যাবে।

এই সময় ভাবলুদা বেশ দামি একটা সিগারেট এর প্যাকেট বের করে, তা থেকে একটা মুখে দিতে দিতে সবার মুখের দিকে চাইলেন, সেটা ধরিয়ে একটা সুখ টান দিয়ে বললেন, “যে জন দিবসে মনের হরষে / জ্বালায় মোমের বাতি। / আশু গৃহে তার জ্বলিবেনা আর / নিশীথে প্রদীপ ভাতি।”
ওখানে যারা ছিল সবাইকে টিপ্পনি কেটে যে বললেন সেটা বোঝা গেল।

হঠাৎই ঝন্টু কোথা থেকে একটা সিগারেট বের করে খগেনের হাতে দিয়ে বলল, নে ধরা,এই টা নিয়ে তোকে কুড়িটা সিগারেট ধার দিলুম, মনে রাখিস ? ভাবলুদা ভেংচি কেটে বললেন, “শৈবাল দীঘিরে কহে উচ্চে করি শির / লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির।” সত্যি ,,একটু আগে খগেনের থেকে মোটর সাইকেল ধার নিয়ে ঝন্টুর একথা বলা মানায় না।

বড়দের কথাবার্তা আর আচার আচরণ আমার দেখতে বেশ ভালই লাগছিল। কি সুন্দর আজ পড়াশুনা করতে হচ্ছেনা, বাবা বাড়ি নেই , ন’কাকার সঙ্গে ক্লাবে এসেছি ,বিন্দাস আছি, ন’কাকা বলেছে চুপচাপ বসে থাকবি, তাই আছি।
শুধু দেখছি ।
এ সময় হরেন বলে, ভাবলুদা সভা শুরু করুন,
সুব্রত বলে এক সদস্য বলে, তুই শুরু কর না । কখন থেকে তো ভাবলুদাকে যা ইচ্ছা বলে যাচ্ছিস। হরেন বলে, কেন, আমি ক্লাবের সভাপতি ? যে সভাপতি সেই তো শুরু করবে ;
ভাবলুদা বলেন, “মুকুট পরা শক্ত / কিন্তু ত্যাগ করা আরও কঠিন। ” ন’কাকা বলে, জানি, শুরু করে দে, কি আর করা যাবে ? আমি ভাবছি,এতক্ষণ তো তালেগোলে ভাবলুদা কথা বলেছে,এবার কি করে সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে মিটিং পরিচালনা করে দেখবো, উদগ্রীব এবং কৌতূহল নিয়ে বসে আছি।
কেমন ভাবে হয় দেখবো —–

      এদিকে সর্বনাশ ! বাবা দেখি ক্লাব ঘরে মুণ্ড ঢুকিয়ে এদিক ওদিক দেখছেন। কাকে যেন খুঁজছেন । বললেন, অর্ঘ্যটা কোথা ? হঠাৎ করে ন'কাকার পাশে ভিজে বেড়ালের মতো আমায় বসে থাকতে দেখে , ভিতরে এসে খপ করে আমার ডানহাত ধরে টেনে হিঁচড়ে  ক্লাবের বাইরে নিয়ে চললেন । কিছু বোঝার আগেই বলতে শুরু করলেন, হারামজাদা !  পড়াশোনার পাঠ বন্ধ রেখে বোম্বেটেদের সঙ্গে বোম্বেটে হতে এসেছো  !  চল বাড়ি ,আজ তোর কি করি দেখ্, এরমধ্যেই আমি চিৎকার করে জোরে জোরে কান্না শুরু করে দিয়েছি, তাতে বাবা আরও ক্ষেপে গিয়ে গদাম করে পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে টানতে টানতে বাড়ির দিকে নিয়ে চললেন। গজরাতে গজরাতে বললেন, হারামজাদা যত না মারছি তার থেকে বেশী চিৎকার করছিস  ?

Leave a Reply