
মধু
সত্যেন মণ্ডল
হঠাৎ করে সন্ধ্যে নামার মুখেই প্রবল জোরে বৃষ্টি এলো। গাছ গাছালিতে ভরা এ গাঁয়ের রাস্তাগুলো মধ্য বর্ষাতেই যাতায়াতের একে বারে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির গতি দেখে মনে হলো আজ শহরে ফেরা সম্ভব না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে অদ্বৈত যখন এমন ভাবছে তখন মৃদু কণ্ঠে পারমিতা বলে,আজ মনে হচ্ছে এখানেই তোমাকে রাত কাটাতে হবে,তুমি আজ থেকে যাও, আমি গরম গরম তোমার প্রিয় খিচুড়ি,ডিমের অমলেট আর বেগুনি খাওয়াবো। যেওনা।
কেন জানে না অদ্বৈত, পারমিতার কথা উপেক্ষা করতে পারল না।
রাতের দিকে দুর্যোগ কমল,আকাশ জুড়ে চাঁদ উঠল , মেঘমুক্ত আকাশ যেন সূর্যালোকের শিশির বিন্দুর মতো ঝলমল করতে লাগল ,এমন দিনে মনটা আনন্দে কার না নেচে ওঠে। বারান্দার একদিকে তক্তপোষের মোলায়েম বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিল অদ্বৈত। পারমিতা এখন মধ্যবয়স্কা নারী, প্রথমা স্ত্রী,ওর প্রতি অন্যায় করেছে অদ্বৈত।
হঠাৎ মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল, পারমিতার কাছে আসা অবধি ফোনটা বন্ধই ছিল , সবে মাত্র ফোন টা চালায় অদ্বৈত, ওদিক থেকে ভেসে এল কর্কশ মেয়েলি কণ্ঠ, দ্বিতীয়া স্ত্রী তাপসীর গলা ,তুমি কোথায় ? রাত বারোটা বাজতে চলেছে ?
অদ্বৈত মিন মিন করে বলে,আ- মি -আমি ,এখানে একবার এসেছি।
“ও-ও-ও তাইতো বলি, কোথায় আছে ! আমার মধুর থেকে ওর মধু বোধহয় মিষ্টি লাগছে ?”
ফোনটার লাইন হঠাৎ কেটে দিল। তাপসী পারমিতাকে একেবারেই সহ্য করতে পারে না অথচ দুই বোন, এক মায়ের পেট থেকেই বেরিয়েছে।
মুহূর্তে চাঁদের আলো বড় নিষ্প্রভ মনে হলো অদ্বৈতর, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগল ” মধু ” শব্দটা নিয়ে।
নিজের একমুহূর্তের ভুলে তাপসীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরিণতি আজকের এমন মানসিক যন্ত্রণা ! সারাজীবন অদ্বৈতকে সহ্য করতে হবে, মুক্তি নেই।