
কে ছিল তোমার আপন
সিদ্ধেশ্বর হাটুই
কে যে ছিল আপন আগে আর আজ কে হয়েছে পর
সমাজটা আজ যাচ্ছে পুড়ে- তার গায়ে ভীষণ জ্বর।
কেউ ভাবেনা কারোর কথা নিজের কথাই ভাবে
স্বার্থপরতার অন্ধকারে কে -কাকে দেখতে পাবে?
খড়ের পালুই এ লেগেছে আগুন নেভানো বড় দায়
মানুষকে আজ খাচ্ছে মানুষ কি আর করা যায় !
বন থেকেতো বাঘ মামারা কতদিন গেছে দূরের সুন্দর বনে
তাই বলেকি হরিণ গুলো পেয়েছে সুখ প্রাণে ?
আকাশে আজ মেঘ জমেছে গুরু গুরু আওয়াজ
বিজলি তোমায় আটকাবো বলে মানুষ মেতেছে আজ।
শ্রেষ্ঠ জাতির পুরস্কারটা মানুষের কপালেই জোটে,
পশুদের যদি থাকতো ভাটাধিকার , মনে হয় -মানুষ হারত লাখো ভোটে।
মানুষের মধ্যে এত ভেদাভেদ যাচ্ছে কেন বেড়ে,
মত্ত হয়ে সুরার সুরে গাইছে- মৃত্যুর গান ঝেড়ে।
জাতিশ্রেষ্ঠ হয়েও মানুষ পাচ্ছে না আজ শান্তি
ভাটার টানে ছুটে ছুটে শরীরে বেড়েছে বড্ড ক্লান্তি।
সমাজে এবার আসুক ফিরে শান্তির ঐ…… জোয়ার
হাসবে তুমি-হাসবো আমি , সকলেই যেন হই একাকার।
মূর্তির অপমান
সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সেদিন ডাক্তার দেখাবো বলে গেছি বাড়ি থেকে বহু দূরে…..
ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরবো বলে বাস ধরতে হেঁটে আসছি পাকা রাস্তা ধরে।
ক্লান্ত হয়ে পথের ধারে থামলাম একটু -ঐ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৌমমূর্তির পাদদেশে….
অবস্থা দেখে ঘুরল আমার মাথা, দেখলাম মহাকবিকে কত জরাজীর্ণ চেহারার বেশে।
জঞ্জালের স্তুপে ঢেকেছে পদযুগল, মাথার চুলগুলো হয়ে পড়েছে যেন এক্কেবারে বর্ণহীন
সকলেই যাচ্ছে ভুলে ব্যস্ততার ভিড়ে, কবিকে যত্ন করার সময় কারো হয়না কনো একদিন।
স্থানীয় একজন বৃদ্ধ মানুষ বসেছিলেন সেখানে, একটু এগিয়ে গিয়ে আমি তারে করলাম জিজ্ঞাসা….
“বাবু” কবির মূর্তির একি হাল ? বাবু বললেন হেসে……’.কি বলবো মশায় পাইনা বলার ভাষা।‘
আমি বললাম কেন…কনো মানুষ নেই একটু সেবা করার ? বাবু বললেন- ‘আমি করিনা কারো আশা !‘
বাবু বললেন –কেন মশায় ? আমিইতো দিন করি জঞ্জাল পরিষ্কার, তাতেই আর কি হয়েছে , মশায়…..আপনি জানেননা !
কত পথচরী প্রতিদিন এসে ফেলে এখানে উচ্ছিষ্ট যত খাবার, আমার কথার কেউ মূল্য দেয়না।
আমি বললাম- কেন দেবেনা ? তারা কি মানুষ না ? শ্লীলতা হরণের অধিকার ওদের কে দিয়েছে ? আইন আছেতো ?
বাবু রেগে বললেন মশায়- ‘ কে ভাবছে ? আপনি জানেন ঐ মূর্তির আড়ালে মানুষ প্রস্রাব করে দেয়। যুগলরা প্রেম করে , মানে না.. তো।‘
বাবু আমার মুখের সামনে এসে বললেন—“ আমিতো আর সদা এইখানে থাকতে পারিনাকো, মন গেলেই আসি।“
আমি তখন বললাম –বাবু সেটা কি আর সম্ভব, আপনি যতটুকু করেন সেটাই ঢের, কেউতো করেনা এরচেয়ে বেশি।
বাবু এবার বললেন হেসে- ‘বর্তমানে মানুষ যাচ্ছে ভুলে- মহান মনীষীদের কথা, এর জন্য বৃদ্ধ মনে লাগে বড় ব্যথা।
পাল্টে যাচ্ছে সমাজ আর বদলাচ্ছে সংস্কৃতি, তার মাঝেও তো -মনে রাখতে হবে মনীষীদের কথা।‘