কৃষকের ঘাম
সিদ্ধেশ্বর হাটুই
মাঠে মাঠে যারা লাঙল চালায়
দিন-রাত খেটে ফসল ফলায়।
রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঝরায় গায়ের ঘাম
সোনার ফসল ফলিয়ে তারা পায়না সঠিক দাম।
চোর-জোচ্চোর দালাল, আরো আছে মহাজন
কম দামেতেই দিতেই হবে রাখতে তাদের মন।
কৃষকের ফসল কমদামে কেনে, বিক্রি করে চড়া দামে
চোর-মহাজন অট্টালিকা বানায় ঐ কৃষকের ঘামে।
কৃষিকাজ করে তাদের পরিবার থাকে অপরিবর্তিত
উন্নতির পথ পায়না খুঁজে, তাতেও ওরা তৃপ্ত।
এসব দেখে কৃষকরা এখন ভাবছে মনে মনে
অন্য কাজে মন দিলে ভাই বাঁচবে আপনজনে,
কেউ যাচ্ছে অন্য রাজ্যে-কেউ যাচ্ছে ব্যাবসায়
কৃষিকাজটা যখন উপেক্ষিত থাকবে বুঝবে তখন সবাই।
কৃষকের কথা কেউ শোনেনা-বাড়ায়না গুরুত্ব
চাষিরাও তাই বুঝে গেছে লাভ-ক্ষতির তত্ত্ব।
এভাবে চললে একদিন দেশ থমকিবে নিশ্চয়
এক শ্রেণীর লোক করবে চুরি, সম্পূর্ণ দেশের ভয়।
ফসল যদি না ফলে সঠিক এই দেশের মাঠে
আগামী দিন সবার এবার লাথি পড়বে পেটে।
কৃষকের গায়ের ঘামের গন্ধের দিতে শেখো দাম
অস্পৃশ্য বলে দূরে ঠেললে উল্টো পরিণাম।
যাদের হাতে কোদাল-কাস্তে আর লাঙল হাতে
তারাইতো অংশনেয় দেশের সেবায় অধিক উন্নতিতে।
কৃষক-মজদুর কাজ করে বলে দেশের উন্নতি
তাদের ক্ষতি হলেই হবে দেশের অবনতি।
কৃষিকে আবার জাগাও তুলে, কতি-পয় স্বার্থান্বেষীর কথা ভুলে
গ্রামে-গঞ্জে মাঠে-ঘাটে যেন সোনার ফসল ফলে।
চলিয়া যাইব একদিন
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
এক দিন এই গ্রহ ত্যাগ করিয়া যাইব অচিন দেশে চলিয়া
যত স্মৃতি গাথা সবারে রাখিয়া উন্মুক্ত হাওয়ায় ভাসিয়া।
দুইটি তীরের সেতুবন্ধনের রাস্তা ধরিয়া চলিয়াছি পথ
এ কূল ছাড়িয়া ও কূলে যাইব চড়িয়া স্বর্ণ রথ।
উজ্জ্বল এই পৃথিবীটা সেদিন হইয়া যাইবে পর
মম মন্দিরে কান্নার রোল, অন্য সকলেই যাইবে ভুলিয়া সত্বর ।
বন্ধু-বান্ধবী , আপন-স্বজন যে চেনে মোরে, করিবে শোক যাপন
মম নেত্রে পড়িবেনা চিত্র , অদেখাই রইবে সকল আপন।
আজ যাহারা মোর হৃদয়ে ঢালিয়াছো গরল
ভুলিয়া যাইয়া সেদিন , থাকিব আমি সদাই সরল।
অব্যক্ত কথা মোর ব্যক্ত করিবার হারাইব সকল ভাষা
সুপ্ত বাসনা এ মনের কামনা, ভুলিয়া যাইব সকল আশা।
হৃদয় মাঝারে থাকিবেনা কনো ক্লান্তি, থাকিবেনা যন্ত্রনা
এ তীর ছাড়িয়া ঐ তীরে গেলে , কেহ দেবেনা সান্ত্বনা।
আমার শৈশবের সেই খেলার মাঠ, ঘুরে ফেরা ঐ পথ ঘাট
সকলে রইবে পড়ি, চলিয়া যাইব দূর দেশে চুকাইয়া ইহ জীবনের পাঠ।
হয়তো সেদিন আরো পরিবর্তিত সভ্য সমাজ উঠিবে গড়িয়া,
সাম্প্রদায়িকতা-হানাহানি আর স্বার্থান্বেষীরা যাইবে বিলীন হইয়া।
আগামী প্রজন্ম ক্রন্দন করিয়া ঘুরিবেনা রাজ পথে পথে,
সকলের হাতে থাকিবে কাজ , সংসার চালাইবে নিজ হাতে।
অগত্যা যদি আসিয়া পড়ে সেই শুভ দিন
মেঘের আড়ালে থাকিব আমি , সম্পূর্ণ অশ্রুহীন।
এ কেমন শিক্ষা
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
এক যে ছিল ছোট্ট শিশু চাকরি করেন পিতা
বেসরকারি স্কুলে পড়ে, বাপের নেই চিন্তা।
দিন দশেকের ছুটি নিয়ে এলেন পিতা নিজ ঘরে
ছেলের মা আর ছেলের মুখে শব্দ এল- ধিন-ধিনতা
কালকে ছেলের পরীক্ষা আছে মা বলল তোর বাবা যাবে স্কুলে
বুঝে নে তুই পরীক্ষাটা দিবি কেমন করে।
পরের দিন সকাল হল ছেলে যাবে জীবনের প্রথম পরীক্ষায়
অতি সত্বর কাজ সেরে ছেলে, যাচ্ছে স্কুলে বাবার হাতটি ধরে।
বেলা যখন সকাল দশটা বসল সকল ছেলেরা স্কুলে
ঐ ছেলের পিতা ভীষণ আকুল কি করা যায় ভেবে।
স্কুলের থেকে ছেলেকে ডেকে বলল ছেলের সচেতন বাপ
প্রশ্নপত্র নিয়ে বাইরে আসবি ,যখন প্রশ্ন পত্র দেবে।
বাপের বেটা ভুলেনা কথা যেমন কথা তেমন কাজ
প্রশ্নপত্র পেয়ে ছেলে প্রসাব যাবো বলে বেরিয়ে এল ছলে
বাবার নিকট উত্তর সবই নিল জেনে এবার দেবে পরীক্ষা সে
একশোর একশো নম্বর পাবে বলে।
অন্য অভিভাবকদের তাই দেখে চক্ষুচড়ক গাছ
এইটুকু ছেলেকে চুরি বিদ্যার শিক্ষা দিচ্ছে বাপ !
এই ছেলেটা বড় হয়ে হবেই বড় চোর নিশ্চয় !
বাকিদের চেয়ে এ পরীক্ষায় এগিয়ে যাবেই দু-এক ধাপ।
এই যদি হয় গুরুজন ছেলে তার আর কি শিখবে
মহাবিদ্যা শিখে ছেলে ভালোই জীবন যাপন করবে।
চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদিনা পড়ে ভাই ধরা
সত্য এই প্রবাদবাক্য পাঠ করেছেন ঐ পিতা।
এমন মানুষ অনেক আছেন সারাটা দেশে ছড়িয়ে
এদের জন্য লম্বা হচ্ছে দেখো চুরি বিদ্যার ফিতা।
না-না নিজের চরখায় তেল দাও ভাই এটা মনে হয় করছি আমি ভুল
যে যা পারে করুক, ও ভাই লাগুক আমার ঢুল।
হরেক রকমের মানুষ আছে তাই বলে এই শিক্ষা দেবে
ভালো শিক্ষা পেলে ঐ ছেলেটা একদিন হবেই গোলাপ ফুল।
পাখিরাও বলে
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
ওরে ও অচিন পাখি
কি যে বলিস আমায় ডাকি
কি যে তোর মনের ভাষা
সেটাই আমার জানার আশা
তুই যদি থাকবি দূরে
ডাকিস কেন এমন করে ?
পাখি বলে—তোর কাছেতে যাবো আমি
এ আশা তোর পাগলামি।
আমরা থাকি নিজের দেশে
ঐ আকাশে যাই যে ভেসে,
আমি বললাম—তাতে আর কি হয়েছে
তোর কথা বড্ড জানার ইচ্ছে।
তুই যদি কাছে আসিস ধরবোনা তো আমি
তোর কথা আমার কাছে সোনার চেয়েও দামি।
পাখি বলে—তোর সমাজের সকলেই স্বার্থপর
তাইতো আমরা বর্তমানে করেছি তোদের পর।
আমি বললাম—আমি তো আর তেমন নই
সকলেই কি আর একই হয়?
পাখি বলে—তোদের জন্য আমাদের সমাজ
ঘর-বাড়ি স্বজন হারাচ্ছে আজ।
যাবোনা কাছে আর, তোদের আড়ি
অচিনকূলে দেব পাড়ি।
ফেরিওয়ালা
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে আমি
কোটি টাকার স্বপ্ন দেখিনা ভাই,
ঘুমের মাঝে হাজার স্বপ্ন
ভিড় করে বেড়ায় ।
হরেক রকম স্বপ্ন আসে চোখে
রাজা-কিম্বা রাজপ্রসাদের নয়,
সমাজ বদলানোর স্বপ্নেরা শুধুই ঘুম ভাঙায়
স্বপ্ন হারানোর যন্ত্রনার কান্নায় লাগে ভয়,
হঠাৎ যখন জেগে উঠি স্বপ্নেরা তখন বলে—
প্রতিকারের পথ কোথায় খুঁজে দেখ সজ্ঞানে ।
অজ্ঞান আর থাকিস না তুই
ফেরি কর তোর স্বপ্ন গুলো নিজ কলম শাণে।
তাই তো আমি আজ ফেরিওয়ালা
নেবে আমার একমুঠো দানা ?
একটু করে নিলেই হবে মনে
দায়িত্ব সবার এই সমাজ বদলে আনা।
সংবিধানে ও আইন আছে
আছে মহারাজা-রাজা, আর শাসন যন্ত্র
দায়িত্ব নিয়ে পাঠ করে ভাই সংবিধানের মন্ত্র।
অধিকার আজ উহ্য থাকে
সাধারন মানুষ হয় ব্যর্থ,
ব্যর্থ চোখের স্বপ্ন ফেরি
লাগবেনা ভালো সবার, বুঝবে এর অর্থ।
নিরাশার মধ্যে আশার আলোর অন্বেষণে
ক্লান্ত হয়েছি তবু আজও, ফেরি করি স্বপ্ন।
তোমরাও যদি একটু নাও
ঘুম ভাঙবে তোমারও , হবেই উদ্বিগ্ন।
হলুদ পাখি
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
ওরে ও হলুদ পাখি……
তোরও দুঃখ আছে নাকি ?
আমার মতন তোর জীবনেও
সুখেরা সব দিয়েছে ফাঁকি?
উড়তে তোর নেইতো মানা
গাছে বাসা উঁচু ঠিকানা,
আমার দেখ ঐ ভাঙা বাসা
বিপদ আসতে নেই মানা।
কদিন আগে ঝড় হলো
তুইকি ছিলি ভালো ?
আমার মতো তুইও নাকি
করেছিলি মন কালো।
ওরে ও হলুদ পাখি……..
সুখেতে নেই তুইও
দুঃখের কথা তোর মুখে
শুনব বলে বসে আছি আমিও।
তোর মনেতে দুঃখ হলে
কাঁদিস কেমন করে?
আমিও তাই তোরই মতো ঝটকে মরি
শত কান্না বুকে ধরে।
তোর জীবন আর আমার জীবন
একই সুতায় বাঁধা।
ভাগ্যটা দেখ আজব কেমন
চারিদিকে দেখি গোলক ধাঁধা।
ওরে ও হলুদ পাখি……
এত করিস ডাকাডাকি
পারবিনা বলতে আমার হয়ে ঐ ঊপরে
‘ভগবান তুমি কেন আমাদের দিচ্ছ ফাঁকি।‘
আমরা যদি এভাবেই থাকি
তোমারও কী লাগে ভালো,
আমাদের জীবনেও জ্বালো প্রভু
একটু সুখের আলো।
দেখবে আমরা চাইবনা অধিক
মোরা এ সিদ্ধান্তে অটল,
যদি তুমি আমাদের ভালোইবাসো
আর করোনা এমন ছল।
আর হবেনা দেখা
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
বিরহী এ মনে
আশা জাগে ক্ষণে ক্ষণে
না পেয়ে তোমার দেখা
নিজেকে লাগে বড় একা,
আমি অস্পৃশ্য
তুমি অদেখা দৃশ্য
আমি যে ভীষণ বোকা
তাই কি পাইনা দেখা?
অবুঝ এই মনে
তোমায় খুঁজেছি সংগোপনে
কাছে তো এলেনা তুমি
তাই দুঃখেই থাকি আমি।
কত শত দূরে
তোমায় খুঁজি বারে বারে
স্বপ্নে দেওয়া কথা
বলেছিলে-‘দেখা হবে সেথা।`
রাধার মতো করে
গিয়েছি অভিসারে
ভেঙেছে ঘুম মোর
তুমি নাই, খুলে দেখি দোর।
বেলা যায় বয়ে
প্রাণে গেছে সয়ে
আর হবেনা দেখা
আমি থাকি শুধু একা।
জেলেদের জীবন
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
জীবনের যত পাওয়া না পাওয়া গুলি
নির্ভর করে জলস্রোতের খেয়ালের উপর
জীবন ঘর সংসার বাজি রেখে তারা
ভেসে বেড়ায়, কে রাখে তাদের খবর।
দিনের সারা বেলা কেটে যায় তরির উপর
রাত্রির অন্ধকারও পারেনা তাদের স্তব্ধ করতে
চোখে নেই ঘুম, হোক না রাত্রি নিঝুম
অচেনা সেই পথে তাদের হবেই যেতে।
জোয়ার-ভাটার খামখেয়ালিপনায়
স্বজনের ব্যথাভরা বুকের চাপা কান্না
বারংবার জাগ্রত করে মনের মাঝারে
তবুও অটল মন পরাজয় মানেনা।
ক্ষুধা ভরা পেটে পাড়ি দেয় পথ
মুখে চোখে ফুটে ওঠে স্বপ্ন জয়ের নেশা।
ক্লান্তিকে জয় করে অবিশ্রান্ত ভেসে বেড়ায়
পরিবারকে বাঁচানোর এ কঠিন পেশা।
শত যন্ত্রনার মাঝে বুকে বাজে গান
মুখে আসে সুমধুর সুর,
উল্টো ঝড়ে বেসামাল হলেও
যেতে হয় বহু-বহু দূর।
তোমাদের জালে জড়ানো সঞ্চয়
দুঃখ ভুলে তোমাদের করে মাতাল।
আশা-নিরাশার স্রোতে ভেসে
সফলতা আনবেই নতুন সকাল।
জেলে তোমাদের জীবন কঠিন
ভিন্ন রকম পেশাও
স্থলের জীবের জীবিকা জলে
তবুও সুখের গান গাও ।
বন্ধু
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
বন্ধু মানেই খেলাধুলা নয়,
বন্ধু চলার সাথী।
বন্ধু মানেই স্কুলে যাওয়া নয়,
গল্প করার সাথী।
বন্ধু মানে ঝগড়া যে নয়,
ভালোবাসার প্রার্থী।
বন্ধু মানেই পাশাপাশি,
বুঝবে তোমার আর্তি।
বন্ধু মানে সুখের যে নয়,
দুঃখেও কাছাকাছি।
বন্ধু অনেকে শত্রু যে হয়,
একথাও আমি ভাবছি।
বাল্য বন্ধু -স্কুলের বন্ধু
বন্ধু সারাক্ষণ ।
আসল বন্ধু খুঁজলে রে ভাই….
তার সংখ্যা কজন।
বন্ধু মানে ভাই ভাই
বন্ধু আপনজন।
বন্ধু মানে একটি বাহু,
বন্ধু- স্বজন।
বন্ধু অনেক আনন্দ দেয়,
আবার অনেকে কুজন।
বন্ধু চিনতে ভুল হলে তাই —
বিপদে পড়বে তখন।
বন্ধু বিহীন থাকে কেহ…..
মানবজাতি ভাই।
বিপদের দিনে দেখবে তুমি
কত বন্ধু নাই।
স্বার্থ দেখে বন্ধু যেজন,
এরা বন্ধু নয়।
বন্ধুর নামে কলঙ্ক এরা,
এদেরই তো ভয়।
বন্ধু সকলেই খারাপ হয়
এমনটাতো নয়,
আসল বন্ধু চেনার ক্ষেত্রে
অনেকেরই ভুল হয়।
ভালো বন্ধুর সঙ্গে থেকো
ভালো থাকবে তুমি।
তাহার সু-পরামর্শের ফলে
লাভবান হবে তুমি।
সেই বন্ধুর ক্ষেত্রে যেন থাকে না সংশয়,
ভালোবেসেই বন্ধু তাকে করবে তুমি জয়।
আজকেরদিনে অনেক বন্ধু
বন্ধুকে মরে ভাই,
বন্ধু নামে ‘কূট` এরা
পান করিওনা তাই।
বন্ধু নামে বদনাম দিয়ে ….
দুঃখ দিওনা আর,
বিপদ তার কে করবে…
সৎ -বন্ধু আছে যার।
শেষবারে তাই বলছি আমি
বন্ধু থাকা খুবেই ভালো,
শুধু দেখবে–কোনটা সাদা, কোনটা কালো।
বিদায়-২০১০
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
এবারের বছর শেষে বিদায় জানানো,
আর নতুন বছরের ওয়েলকাম
কনোটাই উদযাপন করার মতো অবস্থা ছিলনা জঙ্গল মহলে।
কিন্তু মানতে তো হবেই কালের গতিকে,
২০১০ কে ভালো মন্দের মধ্যে রেখে।
কিন্তু কোনটা বেশি? ভাল না মন্দ?
এর উত্তর মানুষের মুখ।
মুখেই বলে দেব অসহনীয় সেই যন্ত্রনার কথা।
আর চোখগুলোর দিকে তাকালে ———–
তার চোখে দেখতে পাবে সেই ছবি,
দিনগুলি ছিল যার রক্তে রাঙানো
পথ ছিল আঁকা বাঁকা।
সেই কাঁটাভরা পথের পথিক যারা,
পেরিয়েছে পথের বাধা,বুঝতে পারেনি,
২০১০ এর অন্তিম পথ চলা, ২০১১ চলে আসা।
২০১০ এর স্মৃতি আঘাত করে বুকে,
মনেহয় -যে বাংলা মায়ের বুকে শতশত শান্তির ফুল বিকশিত হয়েছে
সেখানে কেন এই রক্তের চাহিদা?
কেন এই মহান বিপ্লব?
মাগো তোমার ঐ গৌরবের বুক
আজ কেন গোপন ব্যথায় কাঁদে?
কেন তোমার ঊর্ধ্বেতোলা মাথা আজ নিম্নমুখী?
মাগো -সে দায় কাদের?
একথা ভুললে চলবে না, তোমার কোলে মানুষ হয়েছি,
আমাদের তো একটা সম্পর্ক আছে।
তাই আমাদের হানাহানী………..
‘মাগো` তোমার মুকুটে রক্তের দাগ,
তাই অশ্রু তোমার চোখে।
আজকের সেই বৈশাখ-জৈষ্ঠ জ্বলছে অগ্নিপিণ্ডের মতো ।
একদিকে খাবার জলের হাহাকার, অন্যদিকে সন্ত্রাস।
আষাড়ের সেই ভেজা দিনে আসেনি মেঠো গন্ধ,
আবার শ্রাবন মাসের মাঝামাঝী হয় চাষারম্ভ।
ভাদ্র-আশ্বিন যায়না বোঝা চলছে যে কোন ঋতু।
কার্ত্তিক -অগ্রহায়ন ফসল তুলে ব্যস্ত চাষি ভাই।
কিন্তু তাতেও সহ্য হয়না সমাজবিরোধীদের ছাই।
পৌষ-মাঘের ঐ শীতের দিনে, ঘুম জড়ানো রাত্রে,
আতঙ্কের চাদর ঢাঁকানিয়ে মানুষ ঘুমায় আপন দুঃখে।
ফাল্গুন-চৈত্রের বসন্ততে ফুল ফোটেনা ভাই,
চেয়েছিল ফুটতে,কিন্তু ভয়ে কলি-ই রয়ে গেছে তাই।
বসন্তের সেই কোকিল এবার ভুলে গেছে ডাকতে,
বুলেটের-ই আওয়াজ শুনে কুহু কুহু ডাকতে।
বসন্তেরই হোলি মাগো হল রক্তে লাল,
এবসন্ত সকলের মনে থাকবে চিরকাল।
এ বসন্ত না আসে যেন,আমাদের জীবনে ফিরে,
আবির নিয়ে খেলব হোলি, মাখাব সবার গায়—–
নতুনকরে সাজাব মাকে, নতুন আঙিনায়।
দহন
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
আমাকে আঘাত কর
জ্বালিয়ে দাও আমার আপাদমস্তক
বন্ধ গলার দ্বার দাও খুলে ।
দিকে দিকে পৈশাচিক অত্যাচার,
বঞ্চিতদের হাহাকার দেখে আজ ক্লান্ত হয়েছি।
ভষ্ম করে দাও জুলুমবাজদের
গড়ে তোলা প্রাসাদ।
সমুদ্রের স্রোতে ভাসিয়ে দাও
যত জমে থাকা জঞ্জাল,
মুক্ত হোক সমাজ।
কালো মেয়ে
-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
গ্রামের মেয়ে কালী
রংটা গায়ের কালো
হাতের কাজেও নিপুণা সে
পড়াশোনায় ভালো।
আঠারো বছর পেরিয়ে সে
উনিশে দিয়েছে পা,
বিয়ে এবার দিতেই হবে, বলছে সারা গাঁ
একই কথা বলছে আবার কালীর বাবা-মা।
শুরু হল পাত্র দেখা অদূর ছোট্ট গ্রামে,
পাত্র বড় ব্যবসায়ী করেছে ফোর ক্লাস পাশ,
পনের টাকা দেনা পাওনা চায় যে অনেক
শুনে কালীর বাপের পড়ে দীর্ঘশ্বাস।
মনে মনে ভাবে আমার কালী
পড়াশোনায় ভালো।
বুদ্ধি আছে, লম্বা- চওড়া
হোক না একটু কালো।
মেয়ে আমার পড়ুক এখন
পরে করবে বিয়ে,
চাকরি পেলেই ভালো পাত্র
যাবে তাকে নিয়ে।
সিদ্ধেশ্বর হাটুই, গ্রাম+পোঃ-সুখাডালী, থানা-সারেঙ্গা, জেলা-বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত