SIDDHESWAR HATUI

দুই বন্ধু
সিদ্ধেশ্বর হাটুই,


বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা ব্লকের সুখাডালী গ্রামে দু-জন বন্ধু স্থায়ী ভাবে বসবাস করতো। একজনের নাম আকাশ আর অন্য জন হল বিকাশ । আকাশের বড়িটা ছিল সুখাডালীর নাপিত পাড়ায়, অন্য জনের বাড়ি ডোম পাড়ায়। তাদের বন্ধুত্ব এত নিবিড় ছিল যে একে অপরের বাড়ির কাজগুলো করে দিত। একে অপরের বাড়িতে খাবারও খেত। একেবারে আত্মিক সম্পর্ক।
আকাশের পাড়ার পূর্ব দিকের মাঠে সেদিন হরিনামের আসর জমেছিল,আর সেই উদ্দেশ্যে বিশাল আকৃতির মেলা বসেছিল।

মেলাতে অনেক দোকান. নাগরদোলা ,টয়ট্রেন, আরো কত কি। তাই দিনের বেলা তাদের যাকাজ ছিল দ্রুতসেরে ফেলার প্লেন করে, সেইমতো কাজ শুরু করে তারা। সময় তখন সকাল পেরিয়ে বিকেল হয়েএসেছে, আর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নেমে আসবে এমন সময় বিকাশ বলে উঠল-‘চল আমার বাড়িতে যে নারকেল গাছটি আছে সেটি কেটে ফেলতে হবে সন্ধ্যার পূর্বে, তারপর মেলা দেখতে যাবো।‘


আকাশ বন্ধুর কথা মতো বলল চল তাহলে দ্রুত সেরে ফেলি। সেই মতো শুরু হয়ে গেল নারকেল গাছ ছেদনের কাজ। গাছটিতে তখনও কিছু নারকেল ছিল। কিন্তু গাছটা অধিক লম্বা হয়ে গিয়েছিল তাই ঝড়-বৃষ্টিতে যাহাতে বাড়িতে না পড়ে যায় তার জন্য কেটে ফেলতে হবে। গাছ কাটার কাজ ছলছে আকাশও বিকাশ দু-জনে করাত টানতে ব্যস্ত।

গাছটি তখন ছেদ করার কাজ প্রায় শেষ। গাছটি ছেদ করার পূর্বে তারা গাছের উপর একটি মোটা রশি বেঁধে রেখেছিল। বিকাশ আকাশকে বলল তুই এবার দূর থেকে রশিতে টানদে তাহলেই গাছটি পড়ে যাবে। সেইমতো আকাশ রশিতে টান দিল, দু-চারবার টান দেবার পর কড়কড় শব্দ করে গাছটি পড়ে গেল। আর তৎক্ষণাৎ বিপদ, আকাশ বুঝতে পারেনি গাছটা কতদূর পর্যন্ত পড়ে সরে আসতে পারে ,সেই ভুলের জন্য গাছের ডগা গিয়ে পড়ল আকাশের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশের প্রাণ শেষ, পাশাপাশি লোকজন ছুটে আসে এবং আকাশের বাড়িতে সংবাদ দেয়। এ সংবাদ শুনে আকাশের পরিবারের সকলে ছুটে চলে আসে সেখানে এবং কন্নায় ভেঙে পড়ে।

হরিনামের আসরে আর মেলাতে এ খবর পৌঁছাতেই সকলেই স্মম্ভিত। সকলেই ছুটে গেল কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। বিকাশ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। প্রতিবেশিরা হাতে মুখে জল দিয়ে তার জ্ঞান ফেরাল। মেলায় সেদিন আর লোকজন থাকলনা। একেবারে থমথমে পরিবেশ।

আকাশ আর বিকাশের মেলা দেখার প্রত্যাশা আর পূর্ণ হলোনা। সেদিনেই তাদের বন্ধুত্বের অন্তিম পরিণতি পেল।

গ্রাম+পোঃ-সুখাডালী, থানা-সারেঙ্গা, জেলা-বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

Leave a Reply