SIDDHESWAR HATUI

ভুল থেকে শিক্ষা
সিদ্ধেশ্বর হাটুই

ভুল থেকে শিক্ষা লাভ করা মানুষের সংখ্যা বর্তমান যুগে নিতান্ত কম নয়। সেরকমই একজন মানুষ হলেন বিকাশ বাবু। তিনি সরকারি কর্মচারী, তার এক মাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন দুবছর পূর্বে। বর্তমানে তার বাড়িতে তিনটি প্রাণী, বিকাশবাবু ও তার একমাত্র ছেলে এবং তার স্ত্রী। ছোট্ট পরিবার হলেও অশান্তির কালো মেঘ আস্তে আস্তে গ্রাস করেছিল বিকাশ বাবুর পরিবারকে। অবশ্য সম্পূর্ণ নিজেদের দোষে। বিকাশ বাবুর স্ত্রী সর্বদাই চাইত তার মেয়ের যে গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন সেই গ্রামে না থেকে অন্যত্র কনো শহরে গিয়ে বাড়ি করে অথবা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকুক। বিকাশ বাবুর জামাই পেশায় শিক্ষক,
তার বড়িতেও তার বাবা-মা ব্যতীত আর কেউ নেই। জামাই এর সুখের সংসারে আগুন লাগানোর জন্য
বিকাশবাবুর স্ত্রী বিকাশ বাবুকে প্রচন্ড চাপ দিতে থাকে। সেইমতো বিকাশ বাবুও দু-চারবার জামাইকে তার বাড়িতে গিয়ে এবিষয়ে বোঝানোর চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু কনো লাভ হয়নি।

সেদিন বিকাশবাবু অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর বিকাশ বাবুর স্ত্রী বিকাশবাবুকে বলেন-‘শুনছো তুমি আজ এক্ষুনি জামাইকে ফোন করে বলো যেন এসপ্তাহেই বাড়িভাড়া করে শহরে চলে যায়, ওখানে থাকলে ওদের বাচ্চা মানুষ হবেনা, আর মা-বাবার পিছনেও অনেক খরচ হয়ে যাবে।’
বিকাশ বাবু কিছু চিন্তা ভাবনা নাকরেই জামাইকে ফোন লাগালেন জামাইকে ফোনে বললেন-‘বাবু শহরে গিয়ে থাকার কথা কিছু ভাবলে? নাকী আমাদের কথার মান রাখবে না। আমার মেয়ে ওখানে থাকতে চাইছেনা সটাতো তুমি ভালোমতই জানো।’
জামাই তখন উত্তরে জবাব দিলেন-‘দেখুন আমার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কনোরকম ইচ্ছে নেই।
আপনি এবং শাশুড়িমা আপনারা দুজনে আপনার মেয়েকে ভুল বুঝিয়ে, ফোনে ফোনে বারবার উল্টো পাল্টা শিক্ষা দিয়ে দিয়ে আপনার মেয়েকে নষ্ট করেছেন, যার ফলে আপনার মেয়ে আমার মাটির মানুষ বাবা-মাকে ঘৃণার চোখে দেখে, খাবার পর্যন্ত দেয়না। আমি একজন শিক্ষক আমার মান-সম্মান আমি বিসর্জন দিতে পারব না। তাছাড়া মা-বাবার প্রতি আমার দায়িত্ব আমি পালন করব’ ।
এই কথা বলে জামাইবাবু ফোনটা রেখে দিল। বিকাশবাবু জামাইবাবার কথাশুনে স্তম্ভিত হলেন। ফোনটা টেবিলে রেখে বিছানাতে শুয়ে পড়লেন।

পরেরদিন সকাল বেলা যখন বিকাশ বাবুর পরিবারের সকলে সকালের খাবার খেতে বসেছেন তখন হঠাৎ একটি গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। তখন বিকাশবাবু দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন। এসে দেখলেন তার মেয়ে বাচ্চা কোলে চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েকে এভাবে দেখে বিকাশবাবু অবাক, মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যান। তারপর বিকাশবাবু ও তার স্ত্রী মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন কী কারনে আজকে মেয়ের আসা, কে কীভাব তাকে এখানে পৌঁছাল? উত্তরে মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে-“বাবা তোমার জামাই আর আমাকে নিয়ে যাবেনা বলেছে। আর বলেছে সে বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গেই থাকবে বৌ না থাকলেও চলবে।তাই গাড়িতে করে নিজে এসে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল।”
একথা মেয়ের মুখ থেকে শুনে বেজায় রেগে গিয়ে বিকাশবাবু ফোন লাগালেন জামাইকে। কিন্তু জামাই ফোন ধরেনি।

তার পর একমাস কেটে গেছে, এদিকে তখন বিকাশবাবুর একমাত্র ছেলে বড়সড় অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে। বিকাশবাবুর ছেলে প্রেম করে একটি মেয়েকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। বার বার ফোন করলেও বিকাশ বাবুর ফোন তার ছেলে ধরেনা। পরে অবশ্য খবর পাওয়া যায় বিকাশবাবুর ছেলে যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছে তার ভাই নেই, সে একা। তাই তার বাবা মেয়ে-জামাইকে একটা বড় বাড়ি কিনে দিয়েছেন। সেই বাড়িতেই তারা আছে, ভবিষ্যতেও তারা সেই বাড়িতেই থাকবে।

বেশ কয়েকমাস কেটে গেছে বিকাশবাবুর মেয়েকে তার জামাই নিয়ে যায়নি। এদিকে ছেলেও বাড়ি আসেনা, ফোন করে শুধু বিকাশবাবুকে জিজ্ঞেস করে ভালো আছে কী না। এসব দেখে শুনে বিকাশ বাবুর স্ত্রী বিকাশ বাবুকে বলেন-“বুঝলে আমি আজকে বুঝতে পারছি ছেলে দূরে চলে গেলে মা-বাবার কত কষ্ট হয়। জামাই বাবাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।”
‘তুমি… তুমি একবার জামাইবাবার বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে এসো, আর বলো আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি, জামাই যেন মেয়েটাকে নিয়ে যায়।’

বেশি বিলম্ব না করে, নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বিকাশবাবু পরের দিন জামাইএর বাড়ি গিয়ে জামাই সহ জামাই এর মা-বাবার নিকট ক্ষমা চায়। তার পর জামাই এসে বিকাশ বাবুর মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যায়।

গ্রাম+পোঃ-সুখাডালী, থানা-সারেঙ্গা, জেলা-বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

Leave a Reply