SIDDHESWAR HATUI

SIDDHESWAR HATUI
SIDDHESWAR HATUI

জয় মা দুর্গা
সিদ্ধেশ্বর হাটুই

এই বৈচিত্রহীনতার জীবন লাগেনা আর ভালো
দীর্ঘ একটি বছরের অপেক্ষার অবসান হলো।
বর্ষা পেরিয়ে আসছে শরৎ ঘাসেরউপর শিশির
মা আসছেন আমাদের মাঝে সবার মন অস্থির।
আট থেকে আশি সকলেই থাকি মহা আনন্দেতে
নবীন পোশাকে নব প্রত্যাশা নিয়ে আগমনি গানে মেতে।
মহালয়ার পর পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে মাতৃপক্ষের সূচনা,
নদীর চরে কাশ বনের অপরূপ শোভা চোখ এড়ানো যায়না।
শিউলি ফুলের সুমধুর গন্ধে প্রভাতের রবি উঠে,
ছাতিম-হিমঝুরি-পান্থপাদপ-শেফালি ফুল ফুটে।
এত উৎসাহ মানুষের মাঝে এসেছে আশ্বিন মাস
মা দুর্গার আগমনে তাই সকলের মনে আনন্দ উচ্ছ্বাস।

দেশ-বিদেশে কোথাও থিম, কোথাও মন্দিরেতে পূজো
প্যান্ডেলের সূচনা হল মানেই আনন্দেতে মজো।
এ বছর মা আসছেন মর্তে গজের উপর চড়ে,
শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা হবে, যেন কেউ না খেতে পেয়ে মরে।
ঢাক-কাঁশি-শঙ্খ ধ্বনিতে ভরবে আকাশ-বাতাস
বছর পরে সন্তান সহ আসছেন মা তাইতো এত উচ্ছ্বাস।

মহাপঞ্চমীতে পূজোর শুরু ,প্যান্ডেলে লোকের আগমন
মহাষষ্ঠীতে দেবী বোধন-অধিবাস আর আমন্ত্রন।
মহাসপ্তমীতে কলাবউ স্নান ও নব পত্রিকা স্থাপন
মহাঅষ্টমীতে মায়ের চরনে মনস্কামনায় অঞ্জলি সমর্পণ।
প্রতিমা দর্শন – খাওয়া-দাওয়া উল্লাসে ভরে সবার মন,
মহাঅষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে হয় সন্ধিপূজোর আয়োজন।
অশুভ শক্তির বিনাশ করো মা এই ধরা ধামে,
প্রার্থনা মাগো বিনাশ কর যত মহিষাসুর আছে শহর-গ্রামে।
মাগো তুমি শক্তি দাও সকল নারীর প্রাণে
দশভূজা করে রক্ষা কর মা নারীর মর্যাদা, তোমার আশিশ দানে।
রোগ- শোক থেকে সকল মানুষকে রেখো মা শান্তিতে
মানুষকে দাও একটু সুবুদ্ধি যেন সকলেই থাকে সকলের পাশে।

নবমীর পর দশমীর দিন খারাপ সকলের মন
কয়েকটি দিনের আনন্দে ভরেনা কনো মানুষের প্রাণ।
দশমীতে সিঁদুর খেলা , মিষ্টি বিতরন-প্রনাম –কোলাকুলি
বেদনাকান্ত মনে মাকে নিয়ে শেষ আনন্দ করেন বাঙালি।

এবার মায়ের বিসর্জন মন যায় দুঃখে ভরে
আবার আমরা অপেক্ষা করব একটি বছর ধরে।

পাগল
সিদ্ধেশ্বর হাটুই

ওরে ও ভাই পাগলা, তুই থাকিস কেন একলা
হেথায়-সেথায় হাটে –বাজারে ঘুরিস তিনবেলা।
জোটেনা অন্ন করে কার্পণ্য যার কাছে যাস চেয়ে
যাদের মন একটু সরল খুশি তুই তাদের দু-মুঠো অন্ন খেয়ে।
বাড়ির অন্য সকলের তোর প্রতি জন্মে গেছে ঘৃণা।
পিতা-মাতা-স্ত্রী-সন্তানের কান্না বন্ধ হয়না।
একদিন তুই সবার জন্য হয়েছিলি আস্থার আস্তানা,
আজকে তোর কি হলো –রে অসহ্য যন্ত্রনা।
হয়তো যেটা চেয়েছিলি পেলিনা তার কিছু
তাই বলে তুই হারিয়ে স্মৃতি, মনটা করলি নিচু।
পাওয়া না পাওয়ার জন্য -রে তোর জীবন হবে শেষ!
এটা ভেবেই বাঁচার লড়াই করলিনা কেন, করলিনা একটু ক্লেশ।

এখন সবাই পাগল বলে ব্যঙ্গ করে ভারি
তুই যে ছিলি কেমন মানুষ বিচার নেই তার-ই,
এভাবে দেখো কত মানুষ পাগল হয়ে যায়
পিতা –মাতার চোখের জলে বন্যা বয়ে যায় ।
সমাজ আজকে পাল্টে গেছে, বাঁচো যে যার –যে যার
পাগল হয়েছে চিকিৎসা করানোর ইচ্ছে আছে কাহার ?
এভাবেই একদিন ঐ মনুষটা সকলের অজান্তে যাবে চলে
সেদিনের সেই শব দেহটা দেবে কোথাও কেউ ফেলে,
সমাজের আছে ঐ দায়িত্ব আরতো কিছু নেই
যে হয়েছে স্মৃতিভ্রষ্ট জীবন কাটাবে সে নিজেই।
হয়তো যদি চিকিৎসা পেতো গড়তো স্বাভাবিক জীবন
পিতা-মাতা-স্ত্রী-সন্তানের ভরে উঠতো মন।
অসমর্থ পরিবার তার নেইতো টাকাকড়ি
পাগল তাই পাগলেই থাকে সমাজ থেকে আড়ি।
পিতা-মাতা যদিন বাঁচে ভুলতে পারেনা তাকে,
মনে পড়লেই কান্না করলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় লোকে।

হায়রে পাগল তোর জন্য তোর মা কাঁদে ঘরের কোনে
তবুও তোর হয় না মনে যাই মায়ের সনে।
পাগলদের জন্য চিকিৎসা করানোর দেখিনাতো কনো সরকারি উপায়
থাকত যদি সঠিক উপায় তাহলে কি আর অকালে এত জীবন যায়।
বদলেছে সমাজ-বদলেছে দিন-বদলেছে প্রশাসন,
একটু সজাগ হওনা সকলে , পাগলরাও তো এই দেশের জনগন।

Leave a Reply