Soudamini Shampa

Soudamini Shampa

ক্লিভেজ ও আমি

সৌদামিনী শম্পা

আমার ক্লিভেজ আছে, আমি এমন পোশাক পরি যাতে তা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। হ্যাঁ আমি ইচ্ছাকৃত ভাবেই দেখাই, কারণ তা সুন্দর। আমার সুগভীর বক্ষবিভাজিকা ও স্ফীত বক্ষপ্রদর্শক পোশাক দেখে তোমাদের কামোদ্দীপন ঘটলে তাতে আমার কোনো দোষ নেই, দোষ তোমার। তুমি তোমার রিপু নিয়ন্ত্রনে অক্ষম! তোমার অক্ষমতাকে আমার ঘাড়ে ঠেলছো কেন? জানি দুর্বলের অজুহাতই সহায়! ঈশ্বর আমাদের যে সৌন্দর্য্য দিয়েছেন, তা ঢেকে রাখবো কেন? কোনদিন তো আমার চোখ সুন্দর, তাই দেখে তোমাদের কামোদ্দীপনা জাগে বলে, আমার চোখ বেঁধে আমায় গান্ধারী করে দেবে!
তোমরাও তো শরীর দেখাও।

তোমাদের বাইসেপ্স, ট্রাইসেপ্স, বুকের বোতাম খোলা জামা, যাতে তোমাদের বক্ষপ্রদেশ স্পষ্ট প্রতীয়মান। কই আমরা তো তোমাদের দোষারোপ করি না! বুক ঢাকতে বলি না! বলি না যে, তোমরা শরীর দেখিয়ে আমাদের উত্তেজিত করো, তোমরা আমাদের যৌন উদ্দীপনা জাগানোর জন্যেই ওই ধরণের পোশাক পরো!তোমাদের ঘরে থাকা উচিৎ! কেন বলবো? আমরা জানি, যা সুন্দর, তা দেখানোতে দোষ নেই। আমরা তো তোমাদের পদে পদে বাঁধতে চাই না, শ্লীল অশ্লীলের দোহাই দিয়ে! তবে তোমরা কেন?

যৌনতা সবার আছে। শারীরিক চাহিদা সবার আছে। লিঙ্গ নির্বিশেষে ঈশ্বর , প্রকৃতি যাই বলো, সে উভয়কেই এই বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন সমান ভাবে সৃজনের উদ্দেশ্য। যাতে এই মানব প্রজাতি, হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স বিশ্বে টিকে থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে যদি লিবিডো শুধু পুরুষের অধিকার হতো, নারীর নয়, তবে সৃজন কি আদৌ সম্ভব ছিল? তাহলে কেন তোমরা সবটাই নিজেদের দখলে নিলে? এবং সেই অজুহাতে নারীর শারীরিক সৌন্দর্য , যদি সে দেখাতে চায়, তাকে নানা নিয়মে বাঁধো? তাহলে সে নিয়ম তোমার জন্য কই?

আসলে আমরা সংযমী, সেই কি আমাদের দোষ? আমরা সন্তানের জন্ম দিই। সেই কি আমাদের দোষ? আমরা সুন্দর। সেই কি আমাদের দোষ? আমি একবারের জন্যেও বলবো না, পোশাকে শ্লীলতা থাকে না, থাকে দর্শকের চোখে এবং তার মন ও মননে। একবারের জন্যেও বলবো না যে, স্বল্প পোশাক যদি ধর্ষণে উদ্দিপ্ত করে, তাহলে শিশু ধর্ষণ কেন, বালক ধর্ষণ কেন? এ প্রশ্ন আমি করবো না! কারণ আমি একবারও তোমাকে অধিকার দেবো না যে, কোনো অবস্থাতেই ধর্ষণ ঘটা সম্ভব বা ঘটানো, এবং তা তুমি তেমন পরিস্থিতিতে করলে তোমার ততোটা দোষ নেই। কারণ তোমার কেন স্বয়ং ঈশ্বরেরও সেই অধিকার নেই!

তাই আমার ইচ্ছা হলে আমি আমার শরীর দেখাবো, যেমন তুমি দেখাও। ইচ্ছে হলে শরীর আপাদমস্তক ঢেকে রাখবো। তুমি কে ঠিক করার , আমি কি ভাবে থাকবো, কেমন থাকবো? তুমি আমি দুজনেই প্রকৃতির সৃষ্টি, তাহলে এত অধিকার, এতো ক্ষমতা তোমায় দিল কে? তোমরাই তো বলো সব তাঁর সৃষ্টি। তাঁর সৃষ্টিতে, তাঁর চোখে কোনো বিভাজন নেই। তাহলে এ বিভাজন কে করলো? তুমি! তোমার নিজের সুবিধা ভোগের লালসায়, আমার মাতৃত্বকালীন নয় মাসের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে? যদি তাই হয়, তবে আমি তোমার সন্তান ধারণে অস্বীকার করি। সমগ্ৰ মানবসমাজ শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাক!

Leave a Reply