Sujit Chatterjee

ফোবিয়া
সুজিত চট্টোপাধ্যায়

সন্ধ্যে সাতটা। বল্টু জানালা দিয়ে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বসে আছে। মনে মনে প্রাণপণে যত গুলো ঠাকুর দেবতার নাম মনে আসছে তাদের সক্কল কে ডেকে চলেছে। একটাই প্রার্থনা
এই বৃষ্টি যেন না থামে। চলুক এই বৃষ্টি সারাক্ষণ , আরও জোরে আসুক। রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যাক। ব্যস,, তাহলেই অঙ্কের স্যার কিছুতেই পড়াতে আসতে পারবেন না।
রান্না করতে করতে মা দু’বার উঁকি দিয়ে দেখে গিয়েছে । বল্টু পড়াশোনায় মগ্ন। এখন দেখে কে বলবে বল্টুর পড়াশোনায় একটুও মন নেই , গ্রেট ফাঁকিবাজ !
ঘড়িতে সাড়ে সাতটা। আর মাত্র কিছুক্ষণ কাটিয়ে দিতে পারলেই শান্তি। এইসময় ঠাকুর দেবতাদের আরও বেশি বেশি ডাকতে হবে। সেই চেষ্টা ই চলছে প্রবল ভাবে।
ঘড়িতে আট টা। ব্যস,, নিশ্চিন্ত ,
জয় ঠাকুর সব ঠাকুর , তোমরা বাঁচিয়ে দিয়েছ। বৃষ্টি থামেনি স্যারও আসেননি , কি মজা।
এইসময় একটু নেচে নিতে পারলে সুখ পাওয়া যেত আরও অনেকখানি , কিন্তু মা’য়ের চোখ সাংঘাতিক। ধরা পরলে রক্ষে নেই। সুতরাং সেই বোকামি না করে একা-একা পড়া ই ভালো।
পড়তে আপত্তি নেই। যত অসুবিধে ওই অঙ্কের স্যার। কেবলই ভুল ধরে আর ধমক দেয় , অসহ্য।
যাক আজকে রেহাই , ওফ্ফ।
মনের মধ্যে যখন হুহু করে আরামের ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে ঠিক তখনই কানে এলো সেই নির্মম ডাক,,, বল্টুউউউউ,,,,
সর্বনাশ একি এতো স্যারের গলা।
হায় হায় একি করলে ঠাকুর , তিরে এসে তরী ডোবালে! এটা কি উচিৎ কাজ হলো ? এরপরে আর তোমাদের ওপর বিশ্বাস থাকবে ?
দূর দূর,,, সব বাজে,, বিশ্বাসঘাতক।
মা বললো,, এই বৃষ্টি তে এলেন ? যদিও আপনার ছাতা ছিল তবুও অনেকটা ভিজে গিয়েছেন।
বল্টু র মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল আগেই। এখন মায়ের মুখে স্যারের ভিজে যাওয়ার কথায় যেন একটা ক্লু পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বললো , না স্যার আজকে আর অঙ্ক করতে ইচ্ছে করছে না। আজকে থাক।
স্যার ভিজে ছাতা নাড়িয়ে বললেন,,,, ও আচ্ছা আজকে ভালো লাগছেনা যখন তাহলে থাক। বলেই যাবার জন্য পা বাড়াতেই বল্টু র বাবা হঠাৎই বললেন ,,, তাহলে মাষ্টার মশাই এই বৃষ্টি মাথায় করে এসেই চলে যাবেন কেন , তারচেয়ে আসুন আমার ঘরে একটু চা সহযোগে একহাত দাবা হয়ে যাক।
স্যার অবাক হয়ে বললেন,,,
আরে আপনার দাবার নেশা আছে নাকি ! কৈ আগে কোনো দিন বলেননি তো। চলুন চলুন , আরে মশাই আমিও যে ঐ রসের রসিক।
এ-ই শুরু। সেই থেকে স্যার অঙ্ক করাতে যত আসতেন তারচেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন দাবার প্রতি।
এখন কেজানে কেন বল্টু আর স্যার কে তেমন অপছন্দ করতো না। পাশের ঘরে চলতো দাবার চাল , বল্টু ইচ্ছে মতো অঙ্ক করতে পারতো। নেহাৎ আটকে গেলে পাশের ঘরে গিয়ে দাবাড়ু স্যারের কাছে একটু জেনে নিতো।স্যার হাসিমুখে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন। বকাঝকার কোনও ব্যাপারই নেই।
আশ্চর্য কান্ড সেই বছরেই বল্টু তার ক্লাসে অঙ্কে হাইয়েষ্ট নাম্বার পেলো।
বাবা মা দুজনেই একবাক্যে স্বীকার করলো বল্টু র হেডে মাথা আছে । তাছাড়া যে মাষ্টার দাবা খেলায় পটু তার মাথাও নিশ্চয়ই নিরেট নয় যথেষ্ট উপযোগী উন্নত মানের এ বিষয় কোনও সন্দেহ থাকতেই পারেনা।
সুতরাং একঘরে দাবা অন্য ঘরে অঙ্কের নিশ্চিন্ত আনাগোনা।
এখন আর বল্টু কে বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা করতে হয়না।
অঙ্ক জলের মতো সহজ সরল।
দাবা যুগ যুগ জিও।

সুজিত চট্টোপাধ্যায় ।।

Leave a Reply