
আকাশের ক্যানভাসে
তুষার ভট্টাচাৰ্য
নিশীথ রাত্তির আকাশে যখন মৃত নক্ষত্রের চোখে ঝরে পড়ে
বিন্দু বিন্দু অশ্রুজল
তখন খাঁ খাঁ শূন্য বুকের ভিতরে সহসা
মৃত্যুর বাসনা জেগে ওঠে ;
হিম শিশিরের জলে মুছে গেছে এই
জীবনের সব অপূর্ণ সাধ আহ্লাদ
চারপাশে শুনি শুধু পতনের শব্দ
নক্ষত্র স্বপ্নগুলি দুঃখের আগুনে পুড়ে
হয়ে গেছে বরবাদ ;
অনাহুত এই জীবনে কখনও দু’হাত ভরে
পাইনি হরিণীর মতন কোনও নারীর হিরণ্ময় ভালবাসা
তাই দুঃখী ব্যাথাতুর হৃদয় জুড়ে অন্ধকারে খেলা করে শুধু নিরাশা ;
তবে আমি কী অনন্ত দুঃখ নিয়ে নিশুতি রাতে একা একা ভেসে যাবো অন্ধকারে নদীর অতল জলে
যেখানে অশ্রু মাখা চিতার পোড়া কাঠ
ভেসে যায় বেনো জলে?
যদি একবার চলে যাই
এই রৌরব পৃথিবী ছেড়ে
ওই রুপোলি মায়া চাঁদের দেশে,
তাহলে আমাকে খুঁজে পাবে না কেউ আর ধুলো মাটি মাখা প্রান্তরে, আলপথে, তৃণঘাসে ;
যে জীবন আমি একদিন নীরবে খুঁজে পেয়েছি সবুজ জোনাকি বনে,
শীত কুয়াশার মাঠে,
ভোরের উঠোনে ছড়ানো রোদ্দুরে বসে থাকা
জোড়া শালিখের চোখে,
দিগন্তের পাকা আমন ধানের শীষে,
সেই জীবন পাখির মতন হুঁশ করে
উড়ে চলে গেছে কবেই
দু’হাতের মুঠো থেকে ;
সেই সব সোনালী দিনগুলি খুব মনে পড়ে
মৃত্যুর বাসনা জেগে ওঠা শীতার্ত রাতে,
যখন উঠোনে বসে মাটির উনুনে
ভাত রান্না করতো মা,
ফুটন্ত ভাতের গন্ধে
আমরা উপোসি ক্ষুধার্ত ভাইবোনেরা
বসে থাকতাম চুপচাপ
গরম ফ্যান ভাতের অপেক্ষায় ;
সেই সব হারিয়ে যাওয়া দিনগুলি যদি ফিরে আসে আবার কখনও স্মৃতির আয়নায় ;
রায় বাড়ির সেই ফ্রক পরা কিশোরী মেয়েটিও
কী এখনও দাঁড়িয়ে থাকে সূর্য ডোবা বিকেলে
বাদল দিনের প্রথম কদমফুল গুঁজে
বিনুনি, খোঁপায়?
যদি কখনও ফের দেখা হয়ে যায় তার সাথে পরবাসে
ক্ষমা চেয়ে নেবো শুধু ক্ষমা চেয়ে নেবো
তার কাছে,
সে কী আমার রাখাল বাঁশি হাতে
আর পড়াবে রাখি ভালবেসে!
যা কিছু হারিয়ে যায় এই ভঙ্গুর
জীবন থেকে
মানুষ খুঁজে পায়না তা আর কখনও ;
শুধু হিমেল বাতাসে উড়ে যায় হা- হুতাশ, ব্যাথার অক্ষর ;
এই সত্য জেনেও কেন রাত জাগা রাত্তিরে বুকের ভিতরে
জেগে ওঠে আফশোস, দুঃখের ক্ষত?
সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে চলে যাবো আমি একদিন উদাস বাউলের মতন
অনন্তের পথে ;
সাঁই – আমাকে দেখাও
যেখানে সূর্য ডোবা রোদ্দুরের স্বপ্নীল ছবি
আঁকা আছে আকাশের ক্যানভাসে l